একদিন রাস্তায়

বিকেলে রাস্তার মোড়ে বাস থেকে নামতেই পাগলীটা হাত
বাড়ালো হঠাৎ।
বয়স হয়েছে, তবু বোঝা যায়, শরীরের কানায় কানায়
ছিলো থই থই রূপ, আজ কোন্‌ রুক্ষ পাখির ডানায়
অত্যন্ত পড়েছে ঢাকা। যৌবনে পড়েছে খাঁ-খাঁ চড়া;
একদা হৃদয়ে তার দুলতো মাধবীকুঞ্জলতা, তার ঘড়া,
সোনালি মায়াবী ঘড়া থেকে গণ্ডূষ জল
কেউ করেছে কি পান? তার স্বতোজ্জ্বল
পেটে ছিল পৃথিবীর উঠোন পেরুতে-চাওয়া সন্তান কারুর?
সে কি তাকে মাটির হাঁড়িতে ফেলে রেখে সজারুর
মতো কণ্টকিত ছেড়ে গিয়েছিলো গেরস্ত ঘরের
যত্ন আত্যি? হয়তো সে দ্যাখেনি বরের
কোনো মুখ ভাসমান ভবিষ্যতে। আঁকতো কাজল দুটি চোখে,
মাখতো আলতা পায়ে একদা নিশ্চয়। আজ কী দারুণ ঝোঁকে
ঘোরে পথে পথে জমে ধুলোবালি ‘সমস্ত শরীরে, দীর্ঘ চুলে!
পারবে না মুছে দিতে ঘাঁটঘিলা ময়লা সমূলে।

কী হবে ঘামিয়ে মাথা পাগলীকে নিয়ে?
আমার তো কাজকম্ম আছে, আছে ঘরে ফেরা। নিজেকে ছিনিয়ে
নিয়ে যেতে হবে এই রাস্তা থেকে। পাঁচটি পয়সা গুঁজে পাগলীর হাতে
কিসের আঘাতে

হঠাৎ এলাম সবে, ভিড়ে মিশে বাঁচলাম বস্তুত পালিয়ে।
‘আমার বুকের রাঙা পাখিটাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে
বের করে দিবালোকে ভীষণ নখরাঘাতে ছিঁড়ে-খুড়ে তাকে
দিয়েছে চম্পট তোরই মতো একজন’- বললো সে আমাকে,
মনে হলো, ‘তারপর ঝোড়ো মেঘনা হয়ে গেছি এক্কেবারে।

ধুত্তোর শুনেছি ভুল সুনিশ্চয়। পথ চলি, ভাবনার ভারে
কেমন অস্বস্তি লাগে। তোমাকে পড়লো মনে, তুমি হয়তো-বা
পড়ছো লিটল ম্যাগাজিন কিংবা শোভা
দেখছো জানালা থেকে শান্ত মনে নিসর্গের, হয়তো বাঁধছো
ফাঁপা চুল, ছোট বোনটির গালে ঠোনা মেরে সুস্নিগ্ধ সাধছো
গলা বসে এক কোণে। ‘তোরই হতো একজন,’ শুনলাম
যেন ফের পাগলীর হা-হা-স্বর; জানি না কী নাম
তার, মগজের কোষে কোষে যার ঝুলছে বাদুড় অগণন,
হৃদয়ের আত্যয়িক ধূসর সৈকতে ক্ষ্যাপা হাওয়ার স্বনন।

রাস্তায় একটু থেকে ধরাই বিপন্ন সিগারেট
কখনও ব্যস্তবাগীশ হকারের কাছে জেনে নিই রেট
নানান পণ্যের আর পথে স্রেফ বেড়াচ্ছি তো ভেসে।
কেমন বিচ্ছিরি হাসি পেলো, হো-হো উঠবো কি হেসে?
চেয়ে দেখি, পথে-ঘাটে ঘোরে কতো বিকারি, ভিখারি।
হেসেই ফেললাম, ভারি কান্না পেতো নিশ্চিত নতুবা!
রাঙা পাখিটাকে খুব করেছিলো পিচ্ছিল যে-যুবা,
জানি, আমি তার ভুল উত্তরাধিকারী।