একটি চিঠির জন্যে

আজকের ডাকেও আসেনি ওর চিঠি পিয়নের
পায়ে-চলা পথে রোজ
দু’চোখ বিছিয়ে রাখি। কখনো দূরের
অচেনা ব্যক্তির লেখা কোনো
চিঠি, কোনো পার্সেল অথবা
কবিতার বই আসে, কিন্তু আমি যার
হস্তাক্ষরময় অন্তরঙ্গ পত্র পেতে চাই,
সে কেমন নিঃসাড় এখন। সে কি তবে শয্যাগত
অসুস্থতা হেতু? নাকি কোনো অবসাদ,
প্রাগৈতিহাসিক,
এ নবীন হৃদয়কে তার
করেছে প্রবাস ধু ধু? ঘরে ফিরে যাই, ভয় হয়।

এত অন্ধকার, হায়েনার গায়ের রঙের মতো,
কখনো হয়নি জড়ো আমার এ ঘরে। হিস হিস শব্দ শুনি
সারাক্ষণ, মেঝেতে অতল গর্ত পদে
পদে, মনে হয়। এই পত্রহীন প্রহর আমাকে
তলোয়ার মাছের মতন কাটে, শুধু রক্ত ঝরে বুক থেকে।

এইতো ক’দিন আগে পেয়েছি সান্নিধ্য তার, ফুল্ল
হাসি তার ভেসে আসে, যেন এইমাত্র সোফা ছেড়ে
কোনো কাজে অন্য ঘরে গেছে। শূন্যতাকে
চুমো খেলে পাবো তার নিঃশ্বাসের, ত্বকের সুঘ্রাণ। আজ শুধু
রুশ পুতুলের মতো
স্মৃতির ভেতরে স্মৃতি নানা স্তরে জমে।

একজন স্বেচ্ছাচারী নিষাদ ছুঁড়েছে
হঠাৎ বিষাক্ত তীর আমার উদ্দেশে অবেলায়।
কতিপয় লোক, ফিচেল দৃষ্টিতে
তাকায় আমার দিকে, কান্নি মারে, যেমন আহত
ঈগলের প্রতি ঠারে ঠোরে দৃষ্টি হানে
হাড়গিলে, কাদাখোঁচা, কাক।
আজকের ডাকেও আসেনি ওর চিঠি। এলে আমি
আমার ডাগর ক্ষতে প্রলেপ পেতাম,
কী সহজে সকল ভ্রকুটি,
অট্টহাসি উপেক্ষায় হাওয়ায় উড়িয়ে
দিতে পারতাম; এতদিনে জেনে গেছি-
বস্তুত জগতে
মানুষের কাছে যখন যা সবচেয়ে কাঙ্খণীয়,
সেটাই অপ্রাপনীয় থেকে যায় নিশ্চিত তখন।