এসেছি দাফন করে

কেউ কি শুনতে পাচ্ছে বহুদূর থেকে ভেসে আসা
বনপোড়া হরিণীর
আর্তনাদ? সর্ষেক্ষেত, আসশ্যাওড়ার
ঝোপ, মাছরাঙা
আর পানকৌড়িময় বিল,
প্রান্তর পেরিয়ে-আসা ধ্বনি ক্রমাগত
আছড়ে পড়ছে এ শহরে
রাজপথে, গেরস্ত পাড়ায়, কলোনিতে
দেয়ালে দেয়ালে, কারাগারে,
অত্যন্ত সতর্ক
প্রহরী বেষ্টিত ছাউনিতে, পরিখায়
কেউ কি শুনতে পাচ্ছে? নাকি এ আমার
মনেরই খেয়াল? অতিশয় ন্যালাক্ষ্যাপা
কবিত্বের ব্যাপার স্যাপার?

এই তো শুনছি স্পষ্ট এবং নির্ভুল-
কে যেন কুয়াশাময় কণ্ঠে ‘সত্য, সত্য’ বলে যাচ্ছে ডেকে
একটানা, অথচ সাধের
সত্য অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে
সে কবে হয়েছে দেশান্তরী। সে আবার আসবে কি
ফিরে কোনো দিন
ভীষণ উড়নচণ্ডে, ভ্রষ্ট, গৃহত্যাগী
পুত্রের মতন?

‘সুন্দর, সুন্দর, ওরে সুন্দর কোথায় গেলি’ বলে
নেকড়ের গায়ের রঙের
মতো অন্ধকারে কেউ বুকফাটা আওয়াজে ডাকছে
যেরকম মৃণাল সেনের
ফিল্মে ছেলে-হারানো মা উজাড় ভিটায়
ফসলবিহীন
ক্ষেতে ও প্রান্তরে সন্তানের নাম ধরে
ডাকে, ডাকে, ডাকে; সে কোথায়
সুন্দর রয়েছে পড়ে; তার শব নিয়ে কী ভীষণ টানাটানি,
খাবলাখাবলি
করছে শেয়াল আর কুকুরের পাল,
যেমন আকালে করে ওরা আদমসন্তান নিয়ে।

‘কায়ক্লেশে যাচ্ছিলাম ভদ্রাসনে। উল্টো দিক থেকে
ক’জন নধর ভদ্রলোক-
কেউ পান চিবুতে চিবুতে, কেউ কেউ সিগারেট
ফুঁকুতে ফুঁকুতে,
কেউবা মাটিতে লাঠি ঠুকতে ঠুকতে-
আমাকে জিগ্যের করলেন,
‘কোত্থেকে এলেন? আমি সূর্যাস্তের দিকে
দৃষ্টি মেলে বলি,
সাত হাত জমিনের নিচে
এসেছি দাফন করে বিবেকের মৃতদেহটিকে।