এত বছর পরেও

কখন কোন্‌ ঘটনার অনুষঙ্গে কোন্‌ ছবি ভেসে ওঠে
অথবা কোন্‌ ছবি
ডেকে আনে কোন্‌ ঘটনাকে
তার কোনো নির্ধারিত নক্‌শা নেই।
তবে এখানো যখন আমি কোনো বালককে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে
পথ হাঁটতে দেখি, তখন অনিবার্যভাবে আমার ছেলেবেলার
ইশকুলের কথা মনে পড়ে যায়। আর
আমার হৃদয়ে
বাজতে থাকে একটি সোনালি ঘণ্টা।
এছাড়াও কখনো কখনো হঠাৎ
আমার ছেলেবেলোর ইশকুল ঝলসে ওটে স্মৃতিতে।
মাঝারি ধরনের একটা মাঠ
কাঠের নড়বড়ে সিঁড়ি,
নানা কলস্বরের মুখরিত ক্লাশরুম,
হাতে-টানা পাখা, বিবর্ণ ঝালর, সেই মধ্যবয়সী দারোয়ান,
দূর দ্বারভাঙায় ছিল যার নিবাস,
তার খয়েরি গলাবদ্ধ কোট আর খাটো ধুতি
আর জলখাবারের ঘর-এমনি টুকিটাকি অনেক কিছু
মনে পড়ে আমার।
তবে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে চিন্তাহরণ স্যারের কথা,
যিনি ক্লাশ নাইনে
আমাদের ইংরেজি পড়াতেন, যাঁর পড়ানোর ইন্দ্রাজালে
নেসফিল্ডের গ্রামার ইস্তক
হয়ে উঠতো চমৎকার অ্যাডভেঞ্চারময় ভ্রমণ কাহিনী।
এইতো দেখছি তিনি বসে আছেন নিশ্চুপ আলাদা
একটা কাঠের বাক্সের ওপর
তাঁর কাঁচাপাকা চুল আর ভাসাভাসা
দু’টি চোখ নিয়ে। ডুবে আছেন বইয়ের পাতায়।

এমন একটি দিনের কথাও মনে করতে পারি না
যেদিন চিন্তাহরণ স্যারের হাতে কোনো বই দেখিনি
তাঁর সম্পর্কে আমার কৌতুহল
ডানা ঝাপটাতো সকল সময়। তিনি যে ছুটির দিনে জলরঙ
ছবি আঁকতেন, এ খবর
আমি কুড়িয়ে নিয়েছিলাম আগে-ভাগে।
সৌভাগ্যবশত স্যারের একটা ছবি আমি দেখেছিলাম,
তাঁর পুত্রের সৌজন্যে।
ঊষাকিরণ ছিলো আমার সহপাঠী।

কোনো এক দুপুরে
টিফিনের বিরতিকালে
ঊষাকিরণ আমার সামনে মেলে ধরেছিল বাংলার বর্ষা
স্যারের তুলিতে রূপায়িত
রাধার বিরহের মতো পুঞ্জ-পুঞ্জ অন্ধকার আমাকে
অভিভূত করেছিল, মনে পড়ে।

আজ আমি বিলক্ষণ জানি,
আমার সকল সদিচ্ছা সত্ত্বেও সেই ছবির তুচ্ছতাকে
মুছে ফেলা যাবে না। সেই ছবির
মামুলিত্ব প্রমাণ করবার জন্যে কোনো হাবার্ট রিডকে
আমন্ত্রণ জানানোর দরকার নেই।
আমার স্যারের ছবিটা যত তুচ্ছই হোক,
এত বছর পরেও
সেই কাগজে বর্ষার ঘন অন্ধকার নামে
আমার মনের ভেতর আর
অনেকক্ষণ ধ’রে আমার মন কেমন করে।