ফিরে আমি তোমার কাছেই

পথক্লেশ আছে, আছে তৃষ্ণা, ক্ষয়ক্ষতি, ক্ষয়চিহ্ন
নিয়ে তবু ফিরে আসি তোমার কাছেই।

একদা যাদের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, হয়েছিল চেনাশোনা,
তারা কি হারিয়ে গেছে অলক্ষ্যে সবাই? এতকাল
পরে আজো যখন নিভৃত
জানালায় এসে বসে প্রজাপতি কিংবা ছাদের কার্নিশে পাখি
গান হয়, অকস্মাৎ কারো
অস্পষ্ট মুখের রেখা মনে পড়ে যায়, কখনো-বা
চায়ের বাটিতে ঠোঁট রাখার সময় মনে পড়ে আগেকার
সুগন্ধি চুম্বন অগণন;
মনে পড়ে, নজরুলী গজলের মোহন ছায়ায়,
রবীন্দ্রানাথের
অলৌকিক গীতবিতানের সীমাহীন মানবিক মমতায়
আমাদের ভালোবাসা পেয়েছিল সঞ্জীবনী সুর
মারী ও মড়কে দাঙ্গা হাঙ্গামায়, ক্রুর খুনখারাবির কালে।
এখন সকল কিছু ছাপিয়ে তোমার মুখ পিকাসোর দীপ্র
নানান আয়তনিক নারীর মুখশ্রী হয়ে যায়
হৃদয়ে আমার।

আমার উঠোনে ঘরে যাচ্ছে বয়ে পড়স্ত বেলার
রৌদ্রের ঢেউয়ের মতো বিশ শতকের
গহন পূরবী।
কখনো একটি হাত গীতিকবিতার মতো সুস্মিত স্পন্দনে
আমার নির্জন কাঁধে নেমে আসে, সে-হাতে চিত্রিত প্রজাপতি,
আদিম পত্রালি কিছু দেখা যায়। কখনো আমার
রুটিতে স্বপ্নের মধু ঝরে, ঝরে বিন্দু বিন্দু, হা-ভাতে বেলায়।

সুপ্রভাত, ফ্যাক্টরিতে তৈরি হচ্ছে বিপুল ব্যান্ডেজ
রাশি রাশি;
সুপ্রভাত, ফ্যাক্টরি উগরে দিচ্ছে ক্রাচ কোটি কোটি;
সুপ্রভাত, ফ্যাক্টরি উগরে দিচ্ছে অস্ত্র, মারণাস্ত্র, টন টন;
সুপ্রভাত দিকে দিকে মৃত্যুর চোখের মতো চকচক করে
জেনারেলদের বুট পৃথিবীর ম্যাপের ওপর;
সুপ্রভাত, ভীষণ উঠছে দুলে বাসুকির ফণা বারংবার;
সুপ্রভাত, নারীর কোমল হাত দৈনিক সংবাদপত্র
হয়ে যায় ধুধু;
সুপ্রভাত আমার অনামিকায় আজ
হঠাৎ দিলেন নৃত্য জুড়ে নটরাজ!

পথক্লেশ আছে, আছে তৃষ্ণা, ক্ষয়ক্ষতি, ক্ষয়চিহ্ন
নিয়ে তবু ফিরে আসি তোমার কাছেই।
সন্তের ধরনে ধ্যানী চেতনায় জ্বলে
চোখের বদলে চোখ, অধরের বদলে অধর, হৃদয়ের
গহন ধ্বনির মতো
শব্দের বিন্যাসে এনে তোমাকেই কবিতা বানাই।