গেলাম একটি বাগানে

সেদিন শীতবিকেলে আমরা দু’জন
গেলাম একটি বাগানে। তুমি
আমার হাতে হাত রাখোনি, তোমার ঠোঁটে ছিল না
মদির হাসির ঝলক। বাগানে
নানা রঙের ফুল ছিল, অথচ কুসুমপ্রিয় তুমি
আবেগ ভরে করোনি কোনও উচ্চারণ।
বিষণ্ন কোনও গ্রিক দেবীর মতো হেঁটে গেলে
বাগানের এক কোণে; সেখান থেকে
এক মুঠো ছাই কুড়িয়ে তুমি আমার দিকে
ভস্মময় মুঠো বাড়িয়ে দিলে। অনেকক্ষণ পর
অস্বস্তিকর নীরবতাকে ছিঁড়ে
ধ্বনিত হলো তোমার কণ্ঠস্বর, ‘একটি নিরুপম
পাখি তোমাকে উপহার দিয়েছিলাম
এখানে এই বাগানে,
সেই অপরূপ সুন্দর পাখিটিকে পুড়িয়ে
খাক করেছ তুমি।

ময়লা ধুলোর মূর্তির মতো নত মাথায়
দাঁড়িয়ে ছিলাম নির্বাক, নিঃসাড়। হাওয়ার এক ঝটকায়
ঝুরঝুর ঝরে যেতে পারতাম, অথচ অন্তর্গত ঝড়ের
তাণ্ডব সত্ত্বেও রইলাম স্থির। মনে পড়ল,
পাখিটির সারা শরীরে কতই না আদর বুলিয়ে দিয়েছি,
কতবারই না চুম্বন করেছি ওকে
ঝড়ো আবেগে ঋতুতে ঋতুতে। পাখি ছিল
আমার সকল অভিনিবেশের আলোয় সদা স্নাত।

হঠাৎ এক নিশিগ্রস্ত প্রহরে মাথার ভেতর
ভীষণ তোলপাড়, নিষ্ঠার নীলপদ্ম বাজের
চঞ্চু-নখরে ছিন্ন; নিজ হাতে নিমেষে জীবন্ত পোড়াই পাখিকে,
ভস্মরাশি বাগানকে বানায়
শ্মশানভূমি। ভস্মীভূত পাখির দুঃসহ স্মৃতিসহ
আমাকে তুমি নিয়ে এলে এখানে।

যেন কিছুই হয়নি, এইমতো মনোভঙ্গিতে
তোমাকে আলিঙ্গনে বাঁধি, চুম্বন করি তোমার অনিচ্ছুক
ঠোঁটে; আমার মুখ
শিশিরভেজা ভস্মে ভরে যায়। পা দু’টো
কাদায় ডোবে, প্রেতের শীতল আঙুলগুলোর চাপে
আমার চোখের মণি দ্রুত গলতে থাকে এবং
তোমার মুখ প্রজাপতিপুঞ্জ হয়ে
ক্ষমার অগাধ জ্যোৎস্নায় ক্ষণে ক্ষণে স্পন্দমান। এই তো
আমার হাত আহত মাছের মতো
সাঁতার কেটে ভেসে উঠতে চাইছে তোমার স্নিগ্ধ তটে।