যে-কোনো দোকানে

সামগ্রী সৌন্দর্য; রাশি রাশি ওরা জগৎ সংসারে
জেগে আছে থরে থরে, কখনো বা খুব এলোমেলো,
চেতনার নানা স্তরে। এমনকি অবচেতনায়
সামগ্রীর গ্রীবা লীলায়িত; নৃত্যপর চোখ যৌথ
স্মৃতির আভায় জ্বলজ্বলে। অকস্মাৎ গুহাগুলি
জ্যোৎস্নার জোয়ারে ভেসে যায়। সুপ্রাচীন পান পাত্র,

চিত্রিত বাসন, কলসের কানা আর অলংকার
গভীর সংগীতময়। গুহাগাত্র ছায়া ধরে কত,
রাত্তিরে আগুন নিভে গেলে কেউ কেউ মাংস ছেড়ে
করে স্তব প্রত্যুষের। অনেকেই সামগ্রীর দিকে
পুনরায় ধাবমান জাগরণে নেশাগ্রস্ত প্রায়।
স্বপ্নেও সামগ্রী ঝরে, কতিপয় নান্দনিক ফোঁটা।

নানা সামগ্রীর সঙ্গে দেখা হবে ভেবে বারবার
আমিও দোকানে যাই। এ রকম দেখাশোনা ভালো
লাগে ব’লে বহু ঘন্টা দোকানেই কাটে মাঝে মাঝে
এবং দোকানে গিয়ে দেখি খুব লোকজন আছে;
দোকান গুঞ্জনময়, দরাদরি চলে কমবেশি।
প্রতিটি শো-কেস যেন বর্নোচ্ছল ফুলের কেয়ারি।

দোকানে নানান দ্রব্য, প্রতিটি দ্রব্যক খুঁতখুঁতে
গ্রাহকের কাছে অতিশয় লোভনীয় করে তোলা
দোকানদারির তরকিব। আমি এক কোণে একা
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে নিই এটা সেটা, কোনো কোনো
দ্রব্য হাতে তুলে, যেন নির্জন স্বপ্নাংশ নিচ্ছি তুলে,
খানিক পরখ করি; তারপর যথাস্থানে রাখি

অত্যন্ত নির্মোহভাবে। স্মিত মুখে ব্যস্ত, চটপটে
সেল্‌সম্যানের দিকে সলজ্জ তাকাই। পুনরায়
দৃষ্টি ঘোরে চারপাশে-প্রতিটি সামগ্রী থেকে কিছু
আভা বিচ্ছুরিত ক্ষণে ক্ষণে, দেখি তাদের অস্তিত্বে
অনেক সকালবেলা, দিগন্তের মেদুর ইশারা।
দ্রব্যের আড়ালে কিছু গোপনীয় মায়া সৃষ্টি হয়।

দোকানে অপেক্ষা করি। প্রতীক্ষা সুদীর্ঘ হ’লে বলি,
নিজেকেই বলি, তুমি এই কোণে জীবনানন্দের
হরিণ মুখস্থ করো, দ্যাখো এ দোকান নিমেষেই
আচ্ছাদিত আগাগোড়া ওডেসীর পাতায় পাতায়,
অথবা স্মরণ করো মার্বেল কুড়াতে গিয়ে দ্রুত
সে কখন খেয়েছিলো চুমো বাল্যসখিকে হঠাৎ।

কখন যে দোকানের অভ্যন্তরে আরেক দোকান
জেগে ওঠে সপ্তবর্ণ কলরব নিয়ে। সে দোকানে
কোনো দ্রব্য নেই, তবু কেমন প্রোজ্জ্বল প্রদর্শনী-
কিণ্ণরের কণ্ঠে শুনি সেলস্‌ম্যানের শব্দাবলী,
জলকন্যা কাউন্টারে মূল্য তালিকার চতুষ্পার্শ্বে
তোলে সমুদ্রের সুর। গ্রাহকেরা বন্দনা-মুখর।