যদি ফিরে আসি

মা, তোমার আর আমার মধ্যে পনের বছরের
ব্যবধান। তোমার মুখের রঙিন সূর্যাস্ত আমাকে
বলছে আমাদের দূরত্ব আর
নৈকট্যের দীর্ঘ কাহিনী-বলেছে,
কী করে তুমি আমাকে স্নেহের সরোবরে
নাইয়েছ প্রতিদিন। তোমার দোয়ার
পাপড়িগুলো নীরবে
ঝরেছে আমার ওপর।
তোমার শুভকামনা দিয়ে আমাকে
আগলে রেখেছ প্রতি মুহূর্তে।

তোমার কাছেই শিখেছি ঔদার্য, মানবপ্রীতি,
তুমি আমাকে দাঁড়াতে
শিখিয়েছ সত্যের সূর্যোদয়ের সামনে।
তোমার কাছে চিরঋণী আমি,
এই উচ্চারণ এমন তুচ্ছ যে,
তোমাকে বলিও নি কোনোদিন।

মা, সেদিন খর দুপুরে, তুমি আমাকে
ব্যাকুল কণ্ঠে বললে, ‘তুমি যাবে না
আর কোনো জনসভায়
অথবা মিছিল। চাই না
তুমি রক্ত-জবার মতো কথা বলো কোথাও।
তোমার কণ্ঠনালি ওরা চেপে ধরতে চায়,
তা-কি অজানা তোমার?
না, তুমি কোথাও যাবে না আর।
আমার নির্দেশ সবার ওপর জেনো।

মা, তোমার নির্দেশ হিতকথার মতো
অবশ্য মান্য। তোমার বারণকে
সম্মান জানাতে গিয়ে
ভুল করেছিলাম একদা।

এবার আমি তোমার বারণ শুনব না, মা,
কারণ এখন তোমার আমার,
আমাদের পূর্বপুরুষ আর উত্তরপুরুষদের
সবার মা, জননী জন্মুভূমি আমাকে
ডাক দিয়েছে এই সকালে।
দ্যাখো নিরস্ত্র আমি সকল পিছুটান ছেড়ে
খোলা পথে পা বাড়ালাম।

দানব দলনে সফল হয়ে
কপালে জয়টিকা নিয়ে
যদি ফিরে আসি, তখন
আমাকে ক্ষমার আলোয় ধুইয়ে দিয়ে
বুকে টেনে নিও, মা।

২৭.৭.৯৪