যদি তোমার পাশে থাকতাম

কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া আর মুয়াজ্জিনের সুরেলা আজান
ছুঁয়ে যাচ্ছে সুবে সাদিকের ঘুমন্ত শহরকে
নিদ্রাতুর শহরের ঠোঁট ঈষৎ খুলে যায়
দু’টি ফুল ফোটার মতো। এখন তুমি ঘুমিয়ে আছো।

কখন তোমার শরীর থেকে ঘুমের পাপড়িগুলো
খসে পড়বে, জানি না। ভোরবেলার
ঘুমভাঙা মুহূর্তেই কি তোমার মনে পড়বে
এই আমাকে, যে এখন বসে আছে লেখার টেবিলে,
যে তোমার নিদ্রাকে অনুভব করতে চাইছে
শিরায় শিরায়, যে তোমার শরীরের প্রতিটি ভঙ্গি
আবৃত্তি করছে এই মুহূর্তে, যার মগজে
গুনগুনিয়ে উঠছে না-লেখা কবিতার সোনালি ভ্রমর।

যদি এখন আমি তোমার পাশে থাকতে পারতাম, আমার
উৎসুক আঙুলেরা ঘুমের হ্রদ থেকে তোমাকে
টেনে তুলতো নিপুণ জেলের মতো; আমার ওষ্ঠ তোমার ঠোঁটের
স্বপ্নমদির তীরে ফেলতো নোঙর। আমার দৃষ্টি
বিস্ময়ের রেখা এঁকে দিতো তোমার সারা শরীরে,
যেমন কোনো শ্রমনষ্ঠ কৃষক
তার জমিতে দাগ কাটে ফসল ফলানোর
স্বপ্নে বিভোর। তোমার ঘুমে টোল পড়তেই
আমাকে নিবিড় জড়িয়ে ধরতে তুমি। তখন তোমার সত্তা
হাসিতে উদ্ভাসিত, তোমার গোলাপি উপকূলে জেগে-ওঠার
উচ্ছ্বসিত ফেনা, সেই ফেনায় মুখ ধুয়ে
আমি সম্মানিত, সুখী এবং ঋণী হবো নতুন করে।

যদি তোমার পাশে থাকতে পারতাম
এখন এই সোনালি ঘণ্টার ধ্বনিময় প্রহরে,
তুমি আমার বুকে মাথা গুঁজে বলতে, ‘কী? কী? কী?’
নিরুত্তর আমি শুধু তাকিয়ে থাকতাম,
তোমার চিবুক তুলে ধরে নতুন কিছু
আবিষ্কারের আনন্দে অভিভূত হতাম, যেমন
স্বর্গোদ্যানের কোনো বৃক্ষছায়ায় শুয়ে আদম
হাওয়ার দিকে দৃষ্টি মেলে বিস্ময়-বিহ্বল, প্রশ্নাকুল।

১৫.১২.৯৪