জ্যোৎস্নাভেজা রাতে

অকস্মা ঘাসসুদ্ধ মাটি ফুঁড়ে জেগে ওঠে পুরোনো করোটি
জ্যোৎস্নাভেজা রাতে; কোজাগরী পূর্ণিমার রাত ছিল?
বহুকাল পরে যেন তার ইচ্ছা হ’ল পেতে এই পূর্ণিমার
আর কিছু দখিনা হাওয়ার
ঈষৎ পেলব স্পর্শ। এ করোটি কার
জানবে না কেউ খুব সহজে কখনও। এমনকি ঝানু কোনও
গোয়েন্দার পক্ষেও সম্ভব নয় আজ
এ বিষয়ে তেমন নির্ভরযোগ্য তথ্য পেয়ে যাওয়া।

চাঁদিনী পিপাসু এই পুরোনো করোটি বলবে কি
স্বেচ্ছায় কাহিনী তার ঘাস, মাটি, ভাঙাচোরা ইট,
ঝরা পাতা, টাকের মতোই
ন্যাড়া ক্ষেত, মেঠো ইঁদুর এবং থৈ থৈ
দিঘির নিকট? একজন আলাভোলা লোককবি
করোটির কাছে গিয়ে নীরবে দাঁড়ান;
করোটি বিজনে ঢেলে দেয় আস্তে সুস্থে জ্যোৎস্নাভেজা
কণ্ঠস্বরে কয়েকটি গূঢ় শ্লোক, মনে হয় তার।

রাত ক্রমে গাঢ় হয়, লোককবি হঠাৎ কুড়িয়ে নেন মাটি
থেকে কিছু খড়কুটো, তারপর হাতে আসে তার
কর্দমাক্ত সে করোটি, তিনি পূর্ণিমা চাঁদের দিকে
দৃষ্টি রেখে কিছু খড়কুটো দিয়ে ঘষে মেজে তুলে
ধরেন দু’হাতে, করোটির অভ্যন্তর থেকে ভেসে
আসে এক শোকার্ত প্রণয়গাথা আর
নিষ্ঠুর পশ্চাৎপদ সমাজের পাশব জুলুম। করোটির
চোখের খোঁড়ল থেকে অঝোরে রক্তাশ্রু ঝরে জ্যোৎস্নাভেজা মাঠে।
লোককবি দেখেন নিজের মাথা এবং করোটি
এক হতে থাকে, তার শরীর নিমেষে
হাওয়ায় মিলিয়ে যায় আর কবির মাথার খুলি
বড় কর্দমাক্ত, একা ঢুকে পড়ে ঘাসময় মাটির গভীরে।

১৩.৯.৯৮