যৌবনোত্তর বিলাপ

বনতুলসীর গন্ধ, হঠাৎ হাঁসের
চই চই শব্দ আর
ধানের সবুজ ক্ষেতে ধ্যানী
সাদা বক, দোয়েলের শিস,
ফিঙে
পাখিটির নাচ, কুটিরের
ধোঁয়া, আর মফস্বলী
স্টেশনের রাত,
চিলেকোঠা আমাকে ফিরিয়ে
দেয় আমার শৈশব।

জীর্ণ আস্তাবলে
হাড়-পাঁজর-বেরুনো শীর্ণ
ঘোড়া,
হার্নি সাহেবের কুকুরের রাগী
চোখ, বাগানের ফুলদল,
টাটকা কের্কের ঘ্রাণ, তুঁত
গাছ, মহল্লার ক্ষয়িষ্ণু পুকুর,
লাভ লেন,
ভার্সিটির করিডর, মধুর
ক্যান্টিন, আমতলা, আসমান
লাল-করা কৃষ্ণচূড়া, রমনার
সর্পিল লেক, ক্লাশ রুমে
জীবনানন্দের
বনলতা সেন আর
রবীন্দ্রনাথের
দূরে বহু দূরে স্বপ্নলোকে
উজ্জ্বয়িনীপুরে, শেষের
কবিতা,
বাংলার বিদ্রোহ, রাজপথে
পদধ্বনি,
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়া
বাঙালিনী উদ্দাম আঁচল,
কারফিউ আমাকে ফিরিয়ে
দেয় আমার যৌবন।

যৌবন কি সত্যি ফিরে আসে?
দর্পণের স্বচ্ছতায়
পরিস্ফুট যে বাস্তব প্রতিকৃতি,
তার
দিকে চোখ পড়ে যদি, যদি
সিঁড়ি বেয়ে
ওঠার সময় হাঁফ ধরে খুব,
তবে মনে হয়-
যৌবন ফেরে না আর, শুধু
যৌবনের হাহাকার
ধ্বনি প্রতিধ্বনি হয়ে বাজে
মনের গুহায়। ঝাঁক ঝাঁক
ক্ষুধার্ত ইঁদুর ছুটে আসে কী
ক্ষিপ্র যৌবনোত্তর
মানুষের দিকে মহা ভোজের
আশায়। ইঁদুরের
তীক্ষ্ণ দাঁত মাংস ছিঁড়ে নেয়,
হৃৎপিণ্ডে বিকট ফুটো করে,
সে মুহূর্তে মনে হয়-
এই যন্ত্রণার চেয়ে মৃত্যু ঢের
ভালো।

নিঃসঙ্গতা কৃষ্ণকায় ধাঙড়
যুবার মতো সারা গায়ে সাদা
কাদা মেখে আমাকে ভীষণ
জব্দ করে। নেশা ভরে
বাংলা আর হিন্দি
মিশিয়ে কীসব কথা বলে
ব্রাত্য ছন্দে,
কিছু বুঝি, কিছু বুঝি না।
সরোবরে হাত ধুই বার বার,
তবু হায়, রুক্ষতা কমে না
কিছু, যৌবন ফেরে না।

২১.৩.৯৪