কার কী ক্ষতি হতো?

পাশের বাড়ির অনুঢ়াকে কখনো সখনো দেখি
আমি ঝুল বারান্দায় পায়চারি করার সময়। তার চোখ
জুড়ানো সৌন্দর্য নিয়ে সে ঘুরে বেড়ায় ছাদে, কখনো ঘরের
মধ্যে, কখনো বা সাঁজ-ফেরানো বাগানে।

কোনো কোনো দিন কাঁখে
শিশু নিয়ে হাঁটে, শিশুটিকে গাছ, চাঁদ, ফুল পাখি
দেখায় ইঙ্গিতে মুগ্ধাবেশে, কখনো সে
চকিতে শরীরে হরিণীর ছায়া নিয়ে ছুটে যায়।

নিতম্ব অবধি নেমে-আসা একরাশ অসিত শিখার মতো
চুলে একটি কি দু’টি রঙিন পতঙ্গ উড়ে এসে
বসে পুড়ে মরার আশায়, চুমো খায়, যেন ঘোর
অমাবস্যা রাত্তিরের ঠোঁটে
টুকরো, টুকরো জ্যোৎস্না। তরুণীটি এক গাল
হেসে লন থেকে
সযত্নে কুড়িয়ে নেয় খড়কুটো; আমার ভেতরে
কবিতার জন্মজল অলৌকিক কোলাহল করে বারংবার।

শুধু দূর থেকে দেখি তাকে,
কখনো শুনি না কণ্ঠস্বর তার, কান পেতে থাকি
প্রায়শঃ তবুও নিস্তব্ধতার সরোবরে ঢেউ
জাগে না কখনো। সে যখন
ফুলের চারাকে বুকে নিবিড় জড়ায়
তখন শরীরে ওর কী জমাট একরোখা নীরবতা। সূর্যাস্তের দিকে
টলটলে একজোড়া চোখ নিয়ে তাকায় যখন,
মনে হয় তার রূপপ্লাবিত শরীর
গহন ভাষায় কথা বলে
গোধূলির ছোপলাগা মেঘেদের সঙ্গে আর ছায়া
ছায়া পাখিদের ওড়া আর
সদ্য ফুটে-ওঠা নক্ষত্রের সঙ্গে, যদিও কখনো ওষ্ঠে তার
মঞ্জুরিত নয় কোনো ভাষা।
নাম তার জানি না, জানার বাসনাও
করি না প্রকাশ
সঙ্কোচ বশত, শুধু হীরের কুচির মতো কিছু
ভাবনা আমার ঘিরে থাকে
ওকে, মনে হয় সে আমার সে কোন্‌ সুদুর কালে
বিপর্যয়ে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া প্রিয় সহোদরা।

আমার পুরনো সহকর্মী সাদেকিন, এখন সে
পরবাসে, এক ভোরবেলা
গরম চায়ের কাপে নিবিড় চুমুক দিতে দিতে গল্পচ্ছলে
বললো তার গাঁয়ের সুন্দরী এক অনূঢ়ার কথা।
নাম ওর বোধ হয় অঞ্জলি, চোখে দেখে না অথচ
গলার আওয়াজ শুনে নির্ভুল শনাক্ত করে কার
সঙ্গে বলছে সে কথা, পাখপাখালির
সঙ্গে তার নিবিড় পরিচয়, ওরা তাকে
ডেকে নিয়ে যায় খোলা সবুজ ছাতার মতো গাছের ছায়ায়।
ঝোপঝাড়ে, বাঁশবনে, ইঁদারার কাছে।

প্রকৃতি কখন তার শাড়ি পাল্টাবে সে আগেভাগে
বলে দিতে পারে ঘ্রাণ নিয়ে,
ঘাসে পা রেখে সে বলে দেয় কবে পূজো হবে আর
একটা সামান্য কিছু নিয়ে
অসামান্য খুশি হয়ে উঠবার আশ্চর্য ক্ষমতা
সে কোত্থেকে পায় ভেবে সাদেকিনের গাঁয়ের
লোকজন সারা। সেই কখনো না-দেখা অঞ্জলির
কথা মনে পড়লেই বুকের ভেতর চর খুব ধু ধু করে।

কখনো কখনো ভাবি যদি
আমার পাশের বাড়িটার অনবোলা
তরুণী এবং সাদেকিনের গাঁয়ের
অঞ্জলি দু’জন দু’টি আলাদা অনূঢ়া
না হয়ে কেবল একজন সুন্দরী রমণী হতো,
শান্তি আর কল্যাণ ছড়ানো চোখ মেলে
দেখতো পারতো দৃশ্যাবলী আর তার ওষ্ঠ থেকে ঝরে যেতো
কথার বকুল জুঁই বেলী
তাহলে কার কি ক্ষতি হতো?