কেবলি হারিয়ে যাচ্ছে

নিরন্তর গলিত রূপোর স্রোত বয়ে যায় আমার ভেতর,
টের পাই। আমার শৈশব,
কৈশোর যৌবন নানা রূপে মিশে আছে
সেই স্রোতে; আমার অপটু
সাঁতার, বিস্তর ডুব, ভেসে-থাকা
আমাকে এখনও কিছুকাল কেমন মাতিয়ে রাখে, নিয়ে যায়
কে জানে কোথায় অজানায়। রঙিন দুপুর
বিষণ্ণ গোধূলিবেলা, সন্ধ্যারাত গল্প জুড়ে দেয়।

নিরন্তর গলিত রূপোর ছোট ছোট ঢেউ এসে
আমাকে মসৃণ ছুঁয়ে যায়, যেন বন্ধুদের ছোঁয়া
কানামাছি খেলার সময়, ঢেউগুলি
খিলখিল হেসে ওঠে, আমার সুদূর কৈশোরকে
নাচায় অবাধ সুখে যেন। হঠাৎ হারিয়ে যায়
আমাকে পিছনে রেখে। আমি কি বেগানা তবে, হায়,
শৈশবের, কৈশোরের, যৌবনের নিঃসঙ্গ সন্ধ্যায়?
গলিত রূপোর স্রোত, আমার মিনতি রাখো, হারিয়ে যেও না।

মনে পড়ে, কখনও কখনও ছায়াচ্ছন্ন সন্ধ্যারাতে
রূপবতী জলকন্যা, মুখ যার মানবীর, স্তনচূড়া আর নাভিমূল
থেকে যার শুরু হয় মৎস্যরূপ, দেখা দিয়ে চকিতে মিলিয়ে
যেত কারও নিরুচ্চার অথচ অপ্রতিরোধ্য নির্দেশে কোথাও
অজানায়। ঘাটে বাঁধা নৌকোগুলোর বাতিরা যেন
জোনাকির মতো দপ্‌ জ্বলে, নেভে।
আমার কেমন যেন মনে হয়, জলকন্যা চলে যাওয়ার পরে
একটি রূপোলি স্রোত, একটি ডাগর নদী এই শহরের
কেবলি হারিয়ে যাচ্ছে কতিপয় শহরবাসীর বেলাগাম লুণ্ঠনের,
রাক্ষুসে শোষণ আর তান্ডাবের ফলে।
আমার ভেতরে লুপ্ত গলিত রূপোর ধারা, কেবলি হারিয়ে
যাচ্ছে দ্রুত কবেকার রূপসী নদীর উচ্ছলতা।

১২.১২.৯৯