খুব বেশি দূরে নয়

কণ্টকিত দুঃস্বপ্নের ভীষণ কালিমা নিয়ে শঙ্কিত সত্তায়
সবেমাত্র উঠেছি কি জেগে? এক গা ঘেমেই
নিজেকে কেমন ক্লান্ত, অসহায় মনে হয়। বড় ক্লান্ত দুটি
চোখ যেন ফের নিভে আসবে, এমন ধারণার
আওতায় বন্দি হই; পাশে কী নিশ্চিন্ত হয়তো-বা স্বপ্নময়
নিদ্রায় আছেন মগ্ন জীবনসঙ্গিনী।

মনে হয়, আটকে পড়েছি যেন হিংস্র মাকড়সার জালে, মাথা
কবিতার পঙ্‌ক্তি মনে, ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথী’, সেই কবে লিখে
গেছেন রবীন্দ্রনাথ, আজও তাঁর বাণী
বড় সত্য রূপে
করছে বিরাজ
বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায়। দেখছে তো
বিশ্ববাসী হতবাক হয়ে ইরাকের
বুকে আজ দারুণ মার্কিনী বোমার অনাচার,
মৃত্যুগন্ধী যুদ্ধবাজ ট্যাঙ্কের ঘর্ঘরে বিচরণ।

ইরাকের তেলের দুর্দমনীয় ঘ্রাণে উন্মাতাল বুশ দিব্যি
মেতেছেন ধ্বংসযজ্ঞে-পুরুষ, রমণী, শিশু কত
ঘরহীন, ক্ষুধার্ত খুঁজছে হন্যে হয়ে দিগ্ধিদিক
আশ্রয় এবং খাদ্য। এ কেমন ভয়ঙ্কর দুর্ভোগ তাদের
জীবনে দিয়েছে হানা? ওরা তো ভাঙেনি লাঠি কোনও
মোড়লের মাথায়, দেয়নি ছাই কারও বাড়া ভাতে।

প্রাচীন শহর বাগদাদ বোমার তাণ্ডবে আজ
পুড়ছে ভীষণ, ধসে পড়ছে দালান, ভগ্নস্তূপে সভ্যতার
প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে শক্রর লালসাময় মুখে চুনকালি
মেখে দিতে ইরাকের সৈনিকেরা নিয়ত প্রস্তুত। যত বোমা
করুক আঘাত যত্রতত্র, আক্রোশে পোড়াক শত
ঘরবাড়ি, পারবে না কেউ
কখনও করতে রদ চাঁদ সুরুজের আসা-যাওয়া
ইরাকের মুক্ত আসমানে। পারবে না কোনও যুগে।
বাগদাদে ফুল গাছে ফুটবে রঙিন ফুল, বসরায় ফুটবে গোলাপ,
তরুণ তরুণী ভালবেসে সাজাবে সংসার আর প্রতিদিন
রেডিও টেলিভিশনে, নিজ বাসগৃহে শিল্পীগণ
গাইবে বিচিত্র গীত, বাদ্যে ফোটাবে মুধুর সুর। সে দেশের
জমিন সেদিন শক্রমুক্ত, লাপাত্তা বোমার গন্ধ, চতুর্দিকে
জনতার আনন্দ মিছিল, সে মুহূর্ত খুব বেশি দূরে নয়।

২৪-৩-২০০৩