কবির কুকুর

যখন লেখেন তিনি অথবা পড়েন কোনো বই
ভোরবেলা গহন দুপুরে মধ্যরাতে, তখন সে
শুয়ে থাকে নিরিবিলি মেঝেতে একাকী ভারি খুব
কাছ ঘেঁষে, বলা যায়, পায়ের কাছেই। মাঝে মাঝে
হাই তোলে, কৌতূহলী চোখে চেয়ে দ্যাখে কী অস্থির
তিনি করছেন পায়চারি ঘরময়, কখনোবা
ঘাঁটছেন অভিধান, যেমন বালক ঝিনুকের
লোভে খোঁড়ে বালি নদীতীরে; দ্যাখে কবির ওপর
কে যেন করেছে ভর, বুঝি তাই পাতায় পাতায়
নিমিষে উঠছে ফুটে গোলাপের গহনতা, গূঢ়
রজনীগন্ধার গ্রীবা, ভেজা বালিতে চিত্রল কিছু
হরিণের পদচ্ছাপ, চিতাবাঘের অত্যুগ্র রঙ
জ্বলজ্বলে, যুথচারী হাতির সফেদ দাঁত, যেন
পুরুষ্টু চাঁদের ফালি। আর কল্পনায় খরা এলে
ব্যেপে, তিনি নিঃসাড় থাকেন বসে একা, চুপচাপ-
শব্দের মৃগায় স্তব্ধ জটিল অরণ্যে অকস্মাৎ।

যখন ঘুমোতে যান তিনি খাটে বাতিটা নিভিয়ে,
তখন সে নড়েচড়ে ওঠে, মাথাটা ঝাঁকিয়ে মাছি
তাড়াবার সঙ্গে ক্ষিপ্র দাঁড়ায় সটান, তার চোখ
থেকে ঝরে ক্রমাগত মণিরত্ন, রাশি রাশি, আর
হঠাৎ উৎকর্ণ হয়, যেন এই মাত্র রেডিওতে
শুনেছে বিপজ্জনক আবহাওয়া বার্তা কোনো বুঝি
এল ঝড় ভয়ঙ্কর কাঁপিয়ে দুনিয়া, যেন তার
জঠরে পড়েছে ঢুকে হাওয়াময় অন্ধকার, যেন
এখুনি ঘরের ছাদ ধসে পড়ে মাথার ওপর,
প্রেতের দঙ্গল করে ফিসফিস ঘরের চৌকাঠে।
ঘোরে সে কিসের ঘোরে কবির শয্যার চারপাশে,
ডেকে ওঠে বারংবার জীবনের মতো কণ্ঠস্বরে
বিনিদ্র কুকুর।