কয়েক পুরুষ ধরে

কয়েক পুরুষ ধরে পাড়াপড়শিরা দ্যাখে তার
বেল্টের মতন ঝুরি, পাতার সজীব অহংকার,
দ্যাখো বারো মাস তেরো পার্বণে সে অটল দাঁড়িয়ে
থাকে একা; আশেপাশে বেশ কিছু পরগাছা ভাঁড়িয়ে
তারই নাম ওঠে বেড়ে, যেন গৌণ আত্মীয় ক’জন।

ছায়াতলে কখনও মুর্শিদী কিংবা কীর্তন, ভজন
যায় শোনা, গেরস্ত, সন্ন্যাসী, বাউণ্ডুলে, নিঃসন্তান
রমণী, উদ্বাস্তু-অনেকেই জোটে, মানতের ধান
দুব্বা রেখে যায় কেউ, কেউবা সিঁদুর। মেঠো বাঁশি
পড়ে থাকে কখনও বা। সেই কবে দিয়েছিলো ফাঁসি
কাদের ঘরের বউ, সেই কানাঘুষো পথে ঘাটে।

প্রবীণ বাকলে তার নবীন প্রেমিক গাঢ় কাটে
একটি নামের নক্‌শা। গ্রামে দেখা দিলে ওলাওঠা
সে নিশ্চুপ নির্বিকার। পাতায় পাতায় চন্দ্রফোঁটা
ঝরে আকালেও আর হাওয়ায় সঙ্গীতময় হয়
প্রতি শাখা, যেন-বা নীরোর বাঁশি, সন্ত্রাসে নির্ভয়।

বেপরোয়া, রাত্রিদিন, একচ্ছত্র প্রতাপে অনড়,
পারে না নোয়াতে তাকে এমন কি বৈশাখের ঝড়।
জমে কত ইতিহাসকণা তার শিকড়ে বাকড়ে,
অথচ আমূল যায় ভেসে হঠাৎ বানের তোড়ে।