কুমোর

চোখে পড়বার কিছু নয়। শ্যামবর্ণ, মাঝারি গড়ন,
খাটো চুল ভাঙা গাল এবং ধরন
তার আর দশজন পাড়াপড়শিরই মতো। ডাল-ভাত খায়
প্রত্যহ দু’বেলা-মাঝে মাঝে রাত্তিরে ঘুমায়
জড়িয়ে কোমর ঘরণীর, যতদূর আছে জানা
বিড়ি ফোঁকে, কড়া দাড়ি কামায় রোজানা।

কী শীত কি গ্রীষ্ম
ঘোরে চাকা, চকচকে, গড়ে ওঠে ঢের
ঘটিবাটি, হাঁড়িকুড়ি নানান চাঁদের
হাতের খানিক চাপে। একান্ত আপন তার হাত,
নিশ্চিত জানে সে জগন্নাথ।
রত্নের ঝলক বুকে সারাক্ষণ, অথচ কী নিঃস্ব!

কী-যে হয় মাঝে মাঝে,
বসে থাকে চুপচাপ চাখানায় কিংবা গৃহকোণে;
কিছুতে লাগে না মন তার কোনো কাজে।
আবার কখনো রাত জেগে তারা গোনে,
এক ফোঁটা কেমন অনল
করে জ্বলজ্বল
হৃদয়ের ভেতরে, আঙুলগুলি বাস্তবের সীমা
পেরিয়ে চঞ্চল হতে থাকে অবিরত
প্রকৃত নাচের আগে নর্তকীর মতো,
ছুঁতে চায় দ্রুত পরাবাস্তবের গহন দ্রাঘিমা।

তখন নির্জন তার ধ্যানে প্রত্যহের ঘটিবাটি
নয়, নয় গাঢ় কি কলস, একজন অস্পষ্ট প্রতিমা
জেগে থাকে। প্রত্যহ সযত্নে জমায় সে ভিন্ন মাটি
প্রতিমা গড়বে বলে। গড়া হলে দ্যাখে ধ্যানে তার
যে চোখ, উদ্বেল স্তন উঠেছিল ভেসে
তা নেই মূর্তিতে; তাই ঘুমহীন প্রহরের শেষে
ক্ষিপ্র সে খুবলে নেয় চোখ,স্তনদ্বয়। ব্যর্থতার
বিছে তার আত্মাকে কামড়ে ধরে। আবার মাটির দলা তুলে
নেয় হাতে, অস্তিত্বের সমস্ত তীব্রতা দিয়ে গড়ে,
ভাঙে, পুনরায় গড়ে, ভাঙে ফের, ভুলে
থাকে স্রেফ নিজের সংসার। মূর্তি প্রতিবাদহীন,
আর্তনাদ করে না কখনো,
কেননা মাটির কণ্ঠস্বর নেই কোনো।
কুমোর ছোঁয় না অন্নজল, রাত্রিদিন
বুকের ভেতরে তার আলো অন্ধকার,
অলৌকিক উন্মত্ততা ঘূর্ণিনাচ নাচে সারা ঘরে।