ম্যানিলা, শোনো

ম্যানিলা, শোনো, কোনোরকম ভণিতা বিনাই বলি-
বারবনিতার খদ্দের-জোটানো চটকিলা
হাসির মতো তোমার জ্যোৎস্না
কোনো কোনোদিন অবিরত জ্বালা ধরায়
আমার স্মৃতিতে। ভোর গড়ায় দুপুরে, বিকেল রাত্রিতে।
দিনের পর দিন যায়, দিন যায়। মাঝে-মধ্যে কে যেন
অন্তর্গত কী একটা উস্‌কে দ্যায়;
কখনো কখনো যায় এমন দিনও,
যখন শুধু রক্তে আমার বাজে ফিলিপিনো, ফিলিপিনো!

ম্যানিলা, মনে পড়ে, ঝলমলে সকালে কফিশপে
খাচ্ছিলাম ব্রেকফাস্ট, টলটলে সোনালি
চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতে
দেখছিলাম তাকে, মানে আইরিন নাম্নী তরুণীকে।
কাউণ্টারে দাঁড়ানো সে। তার মুখে দক্ষিণপূর্ব রশীয় মাধুর্য,
সূর্য এবং মেঘসমন্বিত মায়া। কী সুন্দর তুমি,
তোমার মুখ থেকে চোখ ফেরানো যায় না,
বলেছিলাম তাকে। সহজ মাদকতাময় দৃষ্টি হেনে
ঠোঁটে ছড়িয়ে দিলো সে
পুষ্প বিকাশের আভা; মনে পড়ে, তার কমনীয় গ্রীবা, স্বপ্নিল
চিবুক আর রমনীয় বুক।
মনে পড়ে, তার কোমল ছিল ক্ষীণ,
আজো রক্তে আমার বাজে ফিলিপিনো, ফিলিপিনো!

ম্যানিলা, আমার আপন শহরের পথে রাত্তিরে
হাঁটতে হাঁটতে ভাবছি তোমার কথা
এই অস্পষ্ট ভিড়ে ভেসে যেতে-যেতে। ভাবছি, তুমি
কতদিন মার্কিন সৈনিকের কোলে বসে, হে নগ্নিকা,
ফষ্টিনষ্টি করেছো, তোমার ক্ষুধার্ত শিশুদের পাশে শুইয়ে রেখে
ভিনদেশী বণিকের যৌনসঙ্গিনী হয়ে
নিজেকে ক্লান্ত করেছো কত মৌন রাতে। তোমার ঊরু
আর স্তন নিয়ত নিষ্পিষ্ট হাজার হাজার বিদেশী হাতে।
না, ম্যানিলা, তুমি অমন তাকিও না আমার দিকে,
রাগ কোরো না লক্ষ্মীটি। বিশ্বাস করো,
লোকে তোমাকে ছেনাল অথবা বেশ্যা বললে
আমার মন ভারি খারাপ হয়ে যায়। তখন নিরালায়
তোমার স্মৃতির বীয়ার পান করতে করতে
পদ্য লিখে মনোভার হাওয়ায় লঘু মিলিয়ে দিতে চাই।
ম্যানিলা, আকণ্ঠ কাদায় ডুবেও তুমি রঙিন ও
জ্বলজ্বলে আর রক্তে আমার বাজে ফিলিপিনো, ফিলিপিনো!

ম্যানিলা, তোমার যন্ত্রণা ও কান্নার কথা ক্ষুব্ধ কণ্ঠস্বরে
বলেছিলেন দীর্ঘকায় অধ্যাপক আরমান্দো মালয়, বলেছিলেন
সলিদারিদাদ বইঘরে পেঙ্গুইন পকেটবুক
দেখার ফাঁকে ফাঁকে। শোকার্ত তাঁর বাক্যের সেতুর ওপর
আমি একটি মৌন মিছিল দেখলাম, দেখতে পেলাম
এমন কিছু মানুষ, যারা বালিতে তৈরি যেন, যারা
বাঙ্‌ময় হতে চায়,
অথচ ওদের কণ্ঠনালী কেমন পাথুরে হয়ে গ্যাছে, সেখানে
উচ্চারণের কোনো ডানাঝাপটানি নেই।
হঠাৎ চমকে উঠে শুনি রিজালের মূর্তি আর স্মৃতিসৌধের তৃণ
হাওয়ায় ইতিহাসের রেণু উড়িয়ে বলে ফিলিপিনো ফিলিপিনো!