মূকাভিনয়

আমরা মূকাভিনয় করি অনেকেই সারাক্ষণ,
আমাদের এ রকম করে যেতে হয় বহুকাল।
এত যে মূকাভিনেতা চুতষ্পার্শে আনাগোনা
করে নিত্য সারি সারি, তা দেখে অবাক মানি। তারা
হাঁটে, বসে, মাথা নাড়ে, কখনো দুদ্দাড় দেয় লাফ,
আবার ঝিমোয় কিছুক্ষণ। মাঝে মাঝে নেচে ওঠে
পুতুলের মতো ঠিক এবং ফুরোলে দম থামে
অকস্মাৎ কখনোবা নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে গাঢ়
অন্ধকারে বহুক্ষণ, দেয়ালের আলেখ্য যেনবা।

আমি কি আলাদা কেউ? বস্তুত আমার প্রাতিস্বিক
ধরন রয়েছে কিছু-যেমন হাঁটার ভঙ্গি আর
সহসা আড়াল থেকে সকলের মুখোমুখি একা
দাঁড়ানোর ঢঙ কিংবা রৌদ্রের সহিত ব্যক্তিগত
যোগাযোগ, অন্ধকার টানেলে সুদীর্ঘ বসবাস।

আমিও মূকাভিনয় করি রাত্রিদিন। হাত-পা নাড়ি,
মাথায় চালাই হাত ঘন ঘন, ঠোঁট ফাঁক করে
হাসতে সচেষ্ট হই, চেয়ারে গা এলিয়ে মৃদুমন্দ
পা দোলাই বারংবার। অকস্মাৎ তীক্ষ্ণ আলো পড়ে
সারা মুখে, গাল বেয়ে পানি নামে। কেন এই উষ্ণ
জলধারা, কাউকেই জানাতে পারি না। প্রাণপণ
চেঁচিয়ে উঠতে চাই, শুধু ঠোঁট নড়ে এলোমেলো,
কখন হারিয়ে গেছে কণ্ঠস্বর, নিজেই জানি না।

কেবলি মূকাভিনয় করি এলেবেলে সারাক্ষণ,
এ রকম করে যেতে হবে দীর্ঘকাল, মনে হয়।