মুখ খোলা আর না খোলা

সব সময় মুখ বন্ধ রাখাটাই
ভয়ের ব্যাপার। আমার মুখে কেউ কোনো
কুলুপ এঁটে দেয়নি। এই তো দিব্যি আমি মুখ খুলে
আমার দু’পাটি দাঁত দেখাতে পারি,
আর এ-ও দেখানো যায়,
ইচ্ছে হলে ঘর কাঁপিয়ে হাসতেও পারে লোকটা।

তাহলে কেন মুখ বুজে থাকবো দিনরাত্রি? কেন আমি
কথা বলবো না, আমার বাকশক্তি যখন অটুট?
সবসময় মুখ বন্ধ রাখাটাই
ভয়ের ব্যাপার! ভয় হয়, এভাবে অষ্টপ্রহর
নিশ্চুপ থাকলে, আমার ভেতরে ক্রমাগত
একটা গোরস্তান তৈরি হতে থাকবে

যদি দিনের পর দিন, রাতের পর রাত
নিজস্ব কণ্ঠ আমি কুয়াশাময় পাথর করে রাখি,
যদি সেখানে সূর্যোদয় না হয়,
তাহলে হয়তো একদিন
খুব সকালবেলা ঘুম থেকে
জেগে উঠে দেখবো, আমি একেবারে বোবা হয়ে গেছি।

কারো সঙ্গে কথোপকথন না হোক
অন্তত দেয়ালের কানে
কিছু কথা বলার দরকার,
যখন বলবার এত কিছু আসে।

না, দেয়ালের কানেও
ফিস্‌ ফিস্‌ করা চলেনা আজকাল। এবং
দেয়ালও গোপনীয়তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে না।
যদি আমি বলি বনদোয়েলের কথা,
বসন্ত দিনে কোকিলের গান আর কৃষ্ণচূড়ার
বিস্ফোরণের কথা,
আমার শহুরে শীর্ণ নদীটির কথা
অথবা জুড়ে দিই মাতাল নাবিক আর জলকন্যার কাহিনী,
কেউ মুখে তর্জনী তুলে বলবে না ‘চুপ রও!’
যদি বলি মারিজুয়ানা একালের উদ্ধার,
যদি সস্তা আদিরসাত্মক গল্প ফেঁদে বসি, ব্লু ফিল্মের
সাতকাহন বর্ণনা শোনাই আর
বেশ্যাপল্লীকে সন্তদের আস্তানা বলে রটিয়ে দিই,
তখন অনকেই আমার কাঁধ ঘেঁষে
বসবে, ঢুলু ঢুলু চোখে বলবে, ‘তারপর?’

অথচ আমার কণ্ঠে উচ্চারিত হলে
শূন্য শানকির কথা, তৃতীয় বিশ্বের
অপুষ্টিগ্রস্ত উলঙ্গ শিশুদের কথা আর
ম্লান, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃস্বপ্নের কথা,
ছাঁটাই-হওয়া শ্রমিকের কথা,
রাহুগ্রস্ত সমাজের কাঠামোয় প্রবল কম্পন জাগানো
গণআন্দোলনের কথা, এলাহি
নিষেধ কর্তব্যরত দ্বাররক্ষীর মতো
বন্দুক উঁচিয়ে হারেরে হারেরে করে তেড়ে আসে।