না, আমি উন্মাদ নই

না, আমি উন্মাদ নই, বিড়বিড় করছি ভাবেন
সর্বক্ষণ? এ আমার মুদ্রাদোষ, বন্ধুরা বলেন।
দেখুন সযত্নে আজও কামিয়েছি দাড়ি, আফটার
শেভ লোশনের ঘ্রাণ গণ্ডময়; দুটো চ্যাপটার
গোগ্রাসে গিলেছি আজও বাস্তবিক আগাথা ক্রিস্টির।
আমি তো জনৈক স্টাফ রিপোর্টার, ধ্বংসের সৃষ্টির
বিচিত্র সংবাদ আহরণে অতিশয় দক্ষ, তাই
নানান মহলে খ্যাত। প্রায়শ এয়ারপোর্টে যাই
ভিআইপি-দের বাণী টুকি কিংবা এঁদো মফস্বলে
ছুটি সংবাদের লোভে কালেভদ্রে। ঝিলে কি জঙ্গলে
খবর শিকার করি। কখনো জমাই পাড়ি জেটে…
রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সোভিয়েতে।

কখনো নেতার ঘরে, কখনো দুর্গত এলাকায়
খবরের ঘ্রাণ শুঁকে আমার অনেক বেলা যায়।
এবারও গেলাম যথারীতি ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড
উপকূলে; কত চরে, জনপদে, অতি দূর গণ্ড-
গ্রামে খুব শান্ত গ্রামে দৈনিক পত্রের লোভী পাতা
ভরিয়ে তুলবো বলে, কিন্তু খাঁ-খাঁ করে ঝানু খাতা।

যে বাতাস সাগ্রহে মানুষ টেনে নেয় বুকে তার,
যে জলে ডোবায় গলা, আঁকে নকশা, কাটে সে সাঁতার
ছিটিয়ে জলজ ফুল, নৌকা যায়, জাল ফ্যালে; হায়
হঠাৎ দারুণ রোষে তারাই জল্লাদ হয়ে যায়।

কোথায় এলাম আমি? পোড়া চোখে একি দেখলাম?
যেদিকে দু’চোখ যায় শুধু শব; কার কী যে নাম
জানি না কিছুই; নয় ওরা শব নয়; রাশি রাশি
ভারা ভারা গলিত ফসল যেন। ভীষণ আগ্রাসী

শক্তি উন্মত্ত তাথৈ নাচে সব মিসমার। ভগ্নী-ভ্রাতা,
পিতা-মাতা, বরবধূ আছে পড়ে, নেই কোনো ভ্রাতা।
বধূটির মেহেদির রঙ তখনো হয়নি ফিকে,
ভেলায় ভাসছে কত গলিত বেহুলা চতুর্দিকে।
বয়েসী পিতার লাশ থেকে ক্ষিপ্র ছিনিয়ে কাপড়
লজ্জা ঢাকে বেবস্তর উদ্‌ভ্রান্ত সন্তান সকাতর।

আমি তো জনৈক স্টাফ রিপোর্টার; জনহীনতার
কণ্টকিত বিস্ময়কে মগজের কোষে পুরে তার-
বার্তা কিছু পাঠাই সংবাদপত্রে; এবং পুনরায়
এ শহরে আসি ফিরে; ভিড়ে মিশি, সময় গড়ায়
যথারীতি। না, আমি উন্মাদ নই, হয়তো বেল্লিক,
কে যেন কলার চেপে বলে শুধু ধিক, তোকে ধিক।

না, আমি উন্মাদ নই; আজো সুস্থদের মাঝে ঠাঁই
রয়ে গেছে, শব্দ লিখি অফুরান, আশ্চর্য এটাই।