না

ব্লাড প্রেসারের গোধূলিবরণ ওষুধ খাওয়া হয়েছে আগেই;
আন্তোনিও গ্রামসি বিষয়ক একটি বই কিছু পড়ে
রেখে দিই টেবিলে। বেলা প্রায় দুপুর-ছোঁয়া,
অর্থাৎ কাঁটায় কাঁটায় সোয়া এগারোটা।
‘হ্যালো’ বলে তোমার কণ্ঠস্বর শোনার আশায় রিসিভার ধরে থাকি,
তখনই কানে এলো ঘুমে-পাওয়া, বিষণ্ণ ‘হ্যালো’।

‘তুমি অসুস্থ না কি? কী হয়েছে বলো তো’।
‘কোনো অসুখ ধরেনি আমাকে, কিছুই হয়নি আমার’।
‘মন খারাপ বুঝি?’
‘আমার মন বলে কিছু নেই’।

সে মুহূর্তে তোমার সত্তা অনূদিত হচ্ছিল
কান্নার মাতৃভাষায়। কী কথা বলব তোমাকে,
কী বলতে কী বলে ফেলব, আমার এই দোটানাকে নাড়িয়ে দিয়ে
বেজে ওঠে তোমার অনিন্দ্য কণ্ঠস্বর, ‘কিছু বলছ না যে!’

‘বুঝতে পারছি, তোমার মন খুব খারাপ, এখন রাখি’।
আমার কথা উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওপার থেকে ভেসে-আসা
‘না’ ধ্বনি আমার মর্মমূল স্পর্শ করে। এমন মাধুর্যময়, এমন
অন্তরঙ্গ ‘না’ কখনো শুনিনি। এই ‘না’ বিশ্বের সংক্ষিপ্ততম
প্রেমের কবিতা হয়ে আমাকে উদ্বেলিত করে, অতিক্রম করে
ছড়িয়ে পড়ে নীলাভতম দিগন্তে, চরাচরে।

১২.৬.৯৪