নীরবতার শতবার্ষিকী

দীর্ঘকাল আমি খুব চুপচাপ আছি।
যতদিন বাঁচি
টুঁ শব্দটি করবো না, করেছি শপথ মনে মনে,
আজ থেকে, বলা যায়, একশো বছর আগে, রণে
ভঙ্গ আমি দিয়েছি যখন।
তিনটি জোয়ান ছেলে আচানক হয়েছে নিখোঁজ, অগণন
রাত আমি হ্যারিকেন নিয়ে
ঘুরেছি নদীর পাড়ে, মাঠে, নাম ধরে ডাক দিয়ে
উদ্ভ্রান্ত ঘুরেছি কত আদাড়ে-বাদাড়ে।
দু’টি মেয়ে মারী মড়কের অন্ধকারে
হয়েছে বিধবা
অকালে; হৃদয়ে টকটকে রক্তজবা
নিয়ে আমি অত্যন্ত নিশ্চুপ রয়ে গেছি। সর্বনাশ
বানে বারবার ভেসে গেছে জমি, বাবুই পাখির বাসা,
পশু পাখি, আমার নিজের গেরস্থলি।
ফেলি নি চোখের পানি, খালি
ফেটেছে আমার বুক, তবু মুখ ফুটে

বলিনি কাউকে কোনো কথা, দীর্ঘশ্বাস মাথা কুটে

মরেছে হাওয়ায় শুধু। গৃহিনী ঘুমান
কবরে শান্তিতে, আমি লাঠি হাতে শুনশান
উঠোনে প্রেতের মতো ঘুরি আমি নিবু চোখে
কোনো বংশধরের সতেজ মুখ খুঁজি, শোকে
পাথর আমার বুক চায়
আজো তারুণ্যের ছোঁয়া, দূর বনচ্ছায়
থেকে ভেসে আসুক শিশুর কলতান,
চায় এই ধুকপুকে প্রাণ।
মনে পড়ে আমার জেদী সে পৌত্র, যার
চোখে ছিল আগুনের পবিত্র ঝলক, অক্ষরের পতাকার
ছায়ায় দিয়েছে প্রাণ শহর ঢাকার রাজপথে
তিরিশ বছর আগে। ঊনসত্তরের আন্দোলনে ক্রুর ক্ষতে
হয়েছে রক্তাক্ত ফুল দৌহিত্রের বুক।
একাত্তরে কাঁধে নিয়ে বিদ্রোহী বন্দুক
আরেক দৌহিত্র গ্যাছে মুক্তিযুদ্ধে, ফেরেনি সে ঘরে
আজো, মনে পড়ে।

এখন ভীষণ একা আমি, অসহায়,
আমার অসহ্য বেলা যায়
স্নেহপরায়ণ কলরব আর বংশধর বিনা।
ইদানীং দেখেও দেখিনা কিছু, শুনেও শুনিনা;
সর্বোপরি বলিনা কাউকে কোনো কথা,
কেবলি বেড়াই বয়ে ধুধু বুকজোড়া বোবা ব্যথা।