নিরন্তর ব্রতী

কী সুখেরই না ছিল সেসব দিন পক্ষিরাজের
ডানা-অলা দিনগুলি আমাকে নিয়ে
উড়ে বেড়িয়েছে আকাশে আকাশে। আনন্দ-আবিরে
রঞ্জিত দিনগুলি
প্রজাপতির রেশমি পাখনা হয়ে খেলা করত বাগানে,
তখন আমার আনন্দের জন্যে কোনও বড় রকমের
আয়োজনের প্রয়োজন ছিল না। ঘরের কোণে
বেড়ালের বসে-থাকা, হাওয়ায় স্পন্দিত ঘাস অথবা
একটি পাখিকে উড়ে যেতে দেখলে
কিংবা সন্ধ্যারাতে বাড়ির কাছে মোটরকার এলে
আমি আনন্দ-সরোবরে নেয়ে উঠতাম এবং
সবার অলক্ষ্যে প্রবেশ করতাম ঝলমলে এক জগতে।

অথচ আমার আনন্দধারা হারিয়ে গেছে
রুক্ষ, ধূ-ধূ মরুভূমিতে। নিজেই আমি
অপমান করে দূরে সরিয়ে দিয়েছি বসন্ত বাহারে ঝস্কৃত
সেই দিনগুলিকে; বেদনার্ত হৃদয়ে ওরা
নির্বাসনে গিয়ে অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে
রেখেছে। অভিমানে। সেই দিনগুলোর দিকে
তাল তাল কাদা আর পাথর ছুঁড়ে ওদের বুক
ঝাঁঝরা করে দিয়েছি।

পরম সুখের সেই দিনগুলিকে ফিরিয়ে আনতে
পারব কি আবার? সেইসব দিনরাত্রি উন্মোচিত হতো
উৎফুল্ল লাল নীল পদ্মের মতো। পদ্মের সুঘ্রাণ আমার
ঘুমের ভেতরেও ছড়িয়ে পড়ত। ওদের ক্রূশে
চড়িয়ে পেরেক ঠুকে ঠুকে ভীষণ ফ্যাকাশে, নিষ্প্রাণ
করে ফেলেছি। এখন ক্রুশ থেকে নামিয়ে
শুশ্রূষা করলে কি ওরা সজীব হাসির ঝর্ণা হ’য়ে উঠবে?
জানি না পুনরুত্থান সম্ভব কিনা আর। তবে আমাকে
আকাশ-ছোঁয়া স্পর্ধায় অসাধ্য সাধনে
নিরন্তর ব্রতী হতে হবে সকল বিরূপতা উজিয়ে।