নৈবেদ্য সাজাই

মাঝে মাঝে যাই, দেশ ছেড়ে বহুদূরে চলে যাই
আমন্ত্রণে, আমিতো আনাড়ি
পর্যটক, পথ হারানোর ভয় বাদুড়ের মতো
ঝুলে থাকে সর্বক্ষণ। পদপ্রদর্শক ছাড়া কোথাও বেরুনো
অসম্ভব। কোন্‌ দিকে যাবো?
নিরাপদ আশ্রয় কোথায়, ভেবে মরি।
তবুও বেরিয়ে পড়ি, ভূদৃশ্য দেখার লোভে? নতুনের স্বাদ
চেখে নিতে? বিচিত্র খাদ্যের আকর্ষণে? এই সব
কখনো করি না অস্বীকার। তবু সবচেয়ে বেশি
মানুষেরই টানে উড়ি, ঘুরি দেশ-দেশান্তরে।

ভিন্ন মুখ, নানা বর্ণ, ভিন্ন ভাষা নানা দেশে, একটু আধটু
বুঝি, সিংহভাগ অজানার
অন্ধকারে ডুবে থাকে। কিছু বা ইঙ্গিতে
বুঝে নিই। যখন বিকেলে একজন শ্বেতাঙ্গিনী
একটি শিশুর হাত ধ’রে হেঁটে যায় পথে,
চকিতে আমার মনে পড়ে জোবেদার কথা। কখনো বা
সাবওয়ে জুড়ে বয় বাউলের সুর। ট্রেন থেকে
বিদেশিনী নয়, যেন আমার দয়িতা নেমে পড়ে।
বহু মানুষের কদাকার মুখ আমি দেখেছি প্রত্যহ। কতবার
কতজন মানুষেই ঘরে দিয়েছে আগুন দ্বিধাহীন; হিংসা
উলঙ্গ উন্মাদ হয়ে নেচে বেড়িয়েছে
দ্বিগ্ধিদিক নাগা সন্ন্যাসীর মতো। কি ব্যাপক বোমার আঘাতে
বহু লোকালয়, হায়, হয়েছে শ্মশান। তবু আমি
নিত্যদিন মানুষেরই দিএক বাড়াই দু’হাত
কথা বলি, আলিঙ্গনে বাঁধি, বারবার প্রতারিত,
উৎপীড়িত হয়েও সমুদ্র তীরে, উন্মুক্ত প্রান্তরে
অথবা ড্রইংরুমে মেলামেশা করি, আমার আপনকার স্বপ্ন
উচ্চারণ করি অনুরাগে। অচেনাকে ভালোবাসি।
কতবার স্বপ্নভঙ্গ হলো, ইতিহাস রুদ্ররোষে
কখনো কখনো দেয় সাজা; কত না নকল রাজা দিনরাত
অগণিত মানুষের সঙ্গে আঁধারে খেলেছে পাশা
এবং করেছে প্রতারণা। কত মতাদর্শ বিভ্রান্তির ঝড়ে
সুপ্রাচীন হাবেলির মতো ধুলায় লুটায়। কিন্তু আমি
মানবতন্ত্রের পায়ে অকম্পিত সাধনার নৈবেদ্য সাজাই।

নিউইয়র্ক, ১৩ আগস্ট ৯৫