নক্ষত্র-বিন্দুর জন্যে

কেন আমি নিমেষেই সর্পমুগ্ধ শশকের মতো
হয়ে যাই আবির্ভাবে তার? কেন শুধু উন্মুখর
একটি অনুরণনে প্রতি রক্তকণা হয় নক্ষত্র-চেতন?

শব্দের মোহন সুরে ঘর ছেড়ে নির্দয় সূর্যের
তৃণহীন প্রান্তরে হারাই পথ, চোরাবালিতেও
পা ঠেকে কখনো আর অরণ্যের জটিল বিভ্রমে
চুল ছিঁড়ি, মুহূর্তে মুহূর্তে মজি মৃগতৃষ্ণিকায়।

যখন মজুর মিস্ত্রি সান্ত্রী আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই
ক্লান্তিহর আদিম নিদ্রায় মগ্ন অকাতরে, আমি কেন শুধু
শয়তানের মতো একা বন্ধ ঘরে করি পায়চারি?
অশান্ত জ্বলন্ত গুপ্ত, নিষ্করুণ জ্বরের মূর্ছায়
নিজেকে খনির মতো কেন খুঁড়ে আনি আজও শব্দের সম্ভার?
এমনকি নিদ্রার ঘোরেও করি কত দেবদুর্লভ প্রগাঢ়
উচ্চারণ, অথচ স্বগৃহে বহু বিবেকী মানুষ
সুখ-পরিমল পান করে কাটায় প্রহর কত
উজ্জ্বল রেশম যব আর তিসির হিসেবে।
তবে কেন, কেন আমি
এমন উত্তাল হই, এমন অধীর
ভূতে-পাওয়া মানুষের মতোই সুদূর আর প্রতিধ্বনিময়
আশৈশব সামান্য মিলের আর ছন্দের সংরাগে?
মাঝে-মাঝে নিরাপদ স্বর্গের মসৃণ অধিবাসী
আমাকেও বিদ্ধ করে দ্বিধাহীন ঘৃণার ত্রিশূলে,
যেমন সদলবলে তারা খাঁচার পশুকে তার
স্বপ্ন থেকে কৌতুকে খুঁচিয়ে তোলে অবলীলাক্রমে
প্রচ্ছন্ন হিংসায় মেতে গরাদের নিশ্চিন্ত আড়ালে?
দান্তে কি উন্মাদ তবে, বোদলেয়ার মাতাল শুধুই?

জেনেছি আমার পথ নয় কিছু নির্বিঘ্ন, সরল;
উপরন্তু সর্বনাশা ঘুঁটির নিহিত পরিণামে
বুকের নক্ষত্র ছিঁড়ে নিয়ে গেছে দুর্জয় শয়তান।।