অচেনা শহরে

স্বপ্নে দেখি পর্যটন বিভাগ অথবা
অন্য কারো পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ভিনদেশী কী এক অচেনা
শহরে প্রবেশ করি আমি বেলাবেলি
অবলীলাক্রমে, দেখি সেখানেও ফোটে রক্তজবা,
জুঁই ও চামেলি।
সেখান করে দেনা লোকজন? দোকানপাটের জ্বলজ্বলে শোভা আর
অত্যন্ত বনেদী ক্লাব, শিশু পার্ক, স্টেডিয়াম, পৌরসভা আছে
সেখানেও, আছে ব্যাংক আর সিনেমার কাউণ্টার।

আমাকে চেনে না কেউ অচেনা শহরে। কারো কাছে
গিয়ে আমি দাঁড়ালেও, হাত
বাড়ালেও কোনো সাড়া পাই না। যদিও সকলেই
স্বাভাবিক চোখ মুখ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অধিকারী। অকস্মাৎ
মনে হয়, বুঝি বা ওদের কোনো সাধ আহলাদ নেই।

বেজায় অটোমেটিক ওরা ঘোরে, হাঁটে
ভাবলেশহীন,
রা’ কাড়ে না কেউ, কিংবা চকিত পাখির পাখসাটে
পলক পড়ে না কারো চোখে। রাত্রিদিন
একাকার, কেউ কারো সঙ্গে দুদণ্ড দাঁড়িয়ে কথা
বলে কিংবা কুশল জিজ্ঞেশ করে হেসে,
পাইনি প্রমাণ তার। কোনো ব্যাকুলতা
নেই কারো বুকের ভেতর। ভালোবেসে
পরস্পর কেউ এক লহমাও তাকায় না কারো
দিকে, ওরা ঘোরে শুধু ঘোরে
চক্রাকারে গাঢ়
অন্ধকারে আর কখনো পথের মোড়ে
হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে, যেমন পুতুল
থেমে যায় হঠাৎ চাবির দম ফুরোলে। নিকটে
গিয়ে ছু’য়ে দেখি, কারো মধ্যে নেই প্রাণের স্পন্দন। নাকি ভুল
করে ভাবি মৃত ওরা। সেখানে যা ঘটে,
কেমন অলীক সবই। সেখানে কবির খাতা থেকে
বেবাক অক্ষর
মুছে যায় প্রবল অদৃশ্য ফুঁয়ে, দবিজ ধুলোয় যায় ঢেকে
অসহায় গায়কের ফুল্ল কণ্ঠস্বর।
স্বপ্নের ভেতরে আমি নিজেকে চিমটি কেটে দেখি
সত্যি নিজে বেঁচে আছি কিনা, এ কেমন মরশুম
অচেনা শহরে দেখি। ভীষণ শীতল সব, এ কি
সেখানে আমিও মরহুম!