অক্ষরের ধারণ ক্ষমতা

যখন তোমাকে দেখি আমি পাঁচ হাজার বছর নিষ্পলক
তাকায় তোমার দিকে; অথচ আমার
দৃষ্টিকে করেছে বন্দি ওরা
অদৃশ্য দেয়াল গেঁথে। রাশি রাশি সিমেন্ট এবং
বালি চোখে পুরে দিতে চায় সকল সময়। যেন আমি
অন্ধ হলে ছিল ভালো, নদীতে হতো না ভরাডুবি।

ভালো ছিল, শৈশবের শ্যামল ছায়ায়
ছিলে তুমি কোনোদিন। তখন তোমাকে ছুঁলে কারো
ধিক্কারের বাজ
পড়তো না আমার মাথায়।
আর আজ চক্ষু মিলনেই ঢি ঢি পড়ে যায় দশদিকে; কেউ
কেউ এমন কি রায় বেঁশে হয়ে ওঠে।

ইচ্ছে হয় চলে যাই এ শহর ছেড়ে ছুড়ে। কেন না আমার
চোখের সম্মুখে তুমি খুব পরিপাটি
সাজাবে অন্যের ঘর, শোবে রাত্তিরে বেগানা বিছানায়-
এই দৃশ্য দেখে
সুন্দর হবে না চোখ কখনো আমার। ভয় হয়
এখন তোমাকে প্রিয়তমা বলতেও ভয় অতিশয়।

তুমি নও নর্তকী, অথচ প্রায়শই ফুটে ওঠে সাবলীল
নাচের মোহন মুদ্রা তোমার শরীরে, ছন্দোচ্ছল
তোমার পায়ের নিচে ধুলো,
ঘাস কার্পেটের মোলায়েম আঁশ খুব
স্নিগ্ধ নেচে ওঠে, আর নিমেষে আমার
কবিতার পঙ্‌ক্তিমালা হয় নানা উদয়শঙ্কর।

যখন ঘুমাই আমি, অতিকায় দাঁড়কাক এক কাছে এসে
চঞ্চু রাখে ভুরুতে আমার,
এবং ধাতব ঘাস ফড়িং-এর ঝাঁক নিমেষে দখল করে
সমস্ত শরীর। চতুর্দিকে আমার স্বপ্নের রোঁয়া
ক্রমশ উড়তে তাকে। দুধ দোয়ানোর
শব্দে ঘুম ভাঙার আশায় থাকি ঘুমের ভেতর।

যে-কোনো আওয়াজে ঘুম ভাঙুক অথবা এমনিতে অকস্মাৎ
ছিঁড়ে যাক ঘুমের রেশমি পাড়, যেন জেগে উঠে
তোমাকেই দেখি। এ জীবনে
খুব অল্প দেখেছি তোমাকে। তাই আজ অক্ষরের
প্রতিমা বানিয়ে তাতে তোমাকেই রাখি
আর ভাবি অক্ষরের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু?