অর্ফির বাঁশির মতো

কত কিছু খসে যায়, সরে যায়, ঝরে যায় ক্রমে
আমার জীবন থেকে। শৈশবের কাগজের নৌকো,
বাবুই পাখির বাসা, তালপাতার ভেঁপু, বৈশাখের
উন্মত্ত হাওয়ায় আমগাছের তলায় ছুটোছুটি
বালক-বালিকাসহ, খুব ভোরবেলা পাতে-দেয়া
নানির হাতের পিঠা ঝরে গেছে সুদূর আড়ালে।

স্কুলে সহাপাঠী ছিল যারা, তারা কে কোথায়
সরে গেছে বহুদূরে; কারো নাম, কারো মুখ
ভুলে গেছি আর বাবুবাজারের মোহন কাঁচের
দোকানের তীর বিদ্ধ দুলদুল পঙ্গপাল-ছাওয়া
সোনালি শস্যের মতো ঝরে গেছে স্মৃতির প্রান্তরে।
জনকের উঠোনে ঘুরতো কান্তিমান দুটো হাঁস,
সুপ্ত ওরা; মাতামহ ঝাপ্সা পুরাণ, এমনকি
পিতৃস্মৃতি মাঝে-মধ্যে মেঘের আড়ালে বড় বেশি
ছায়াচ্ছন্ন হয় আর আজ কাছে আছে যারা, হায়,
তারাও কেমন দূরত্বের কুয়াশায় মুখ ঢাকে।
নিদ্রায় ভ্রমণকারী ওরা, নিশীথে হারিয়ে যায়।

কত কিছু খসে যায়, সরে যায়, ঝরে যায় ক্রমে
আমার জীবন থেকে। একদা বসন্তোৎসব দেখে
যার চোখে লক্ষ পদ্ম ফুটেছিলো হৃদয়ে আমার,
যাকে ছুঁয়ে জেনে গেছি অমরত্ব বলে কাকে, সে-ও
আমার সকল আকাঙ্ক্ষার বহ্ন্যৎসব করে যায়
দীর্ঘ পরবাসে। শুধু তুমি হে আমার বর্ণবোধ,
মাতৃভাষা ক্রমশ আমার আরো কাছে এসে যাও,
অস্তিত্বের গ্রন্থিমূলে অর্ফির বাঁশির মতো বাজে।