পিতা-পুত্র

সে, আমার ছেলে, আজো পারে না বলতে কোনো কথা
কিছুতেই; শব্দাবলি পাখির ছানার মতো শুধু
ক্ষীণ ডানা ঝাপটায়। জিভে তার রাজ্যের জড়তা
জুড়ে থাকে সারাক্ষণ, শব্দের জগত করে ধু-ধু
অবিশ্বাস্য শূন্যতায়। কখনো কথায় ঝলমল
মরীচিকা চোখে তার আশার ঝালর বুঝি আনে।

দেখি কিছু ঠোঁট নড়া, নিমেষেই ব্যর্থতায় টল-
টলে চোখে নামে ছায়া। মগজের অরূপ বাগানে
মধ্যে-মধ্যে বুলবুলি গায় গান, অথচ সে-গান
কণ্ঠের ধূসর পথে কেবলই হারায় দিশা। আর

দশজন ছেলেমেয়ে যখন ফোটায় অফুরান
কথার বিচিত্র খই, তখন সে ব্যর্থতায় ভার
বয়ে ক্লান্ত, চেয়ে থাকে তাদের মুখের দিকে কী-যে
ভয়ানক স্তব্ধতায়। এই স্তব্ধতার পরিচয়

কিছু জানি;বহুবার গভীর রাত্তিরে আমি নিজে
হয়েছি ভীষণ বিদ্ধ শব্দহীনতার দাঁতে। ভয়,
তখন আমার বড়ো ভয় করে আর হাতড়ে মরি
ক্ষমাহীণ শূন্যতায় কবিতার কতো নিরুদ্দেশ
শব্দাবলি। ছেলেটাকে বুকে নিবিড় জড়িয়ে ধরি,
বলি তাকে, “তুইতো আমার সেই প্রতিশ্রুত দেশ।”

যখন ঘুমায় খোকা, ডুবে যায় আরো বেশি আরো
শব্দহীনতায়, তখন নিঃশব্দে যাই তার কাছে।
আমার দুচোখ ভেজে, গাঢ় অন্ধকারে যেন কারো
কবরের পাশে আমি শোকাহত। সে ঘুমিয়ে আছে।