প্রতিমাসন্ধানী

মুমূর্ষ সূর্যের দিকে চোখ,
অস্তরাগে কারুকাজময় মঞ্চসহ কুশীলব
ডুবে যায়, পোকা-মাকড়ের ভিড় ধেয়ে আসে নানা দিক থেকে,
ঝাঁক ঝাঁক রাগী পাখি ভীষণ চককর কেটে কেটে
হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে ঘর-বাড়ি তছনছ করে
চঞ্চুর আঘাতে, হিচ্ককি ছায়াছবিতে যেমন।

দূরের ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ ঝানু
গোয়েন্দার মতো চোখে চোখে রাখছে আমাকে, আমি
তবু খুব প্রকাশ্য পাহারা, বলা যায়,
উপেক্ষা করেই ডুব দিই সেই ভরা সরোবরে, লোকে যাকে
নিদ্রা বলে, আমার দু’হাত স্বপ্ন দেখে, হাতল দাঁড়িয়ে আছে
দড়ির সাঁকোয়, যেন জমাট পাটল মেঘস্তূপ।

আহত যোদ্ধার মতো
কতকাল একা একা করবো লালন ক্ষত, কতকাল আর?
ব্যান্ডেজে অচিন পাখি বসে, মাঝে মাঝে
স্মৃতিজাগানিয়া শিস দিয়ে আরো বেশি
স্মরণ করিয়ে দেয়- এখন কোথাও কেউ আমার উদ্দেশে
রাখেনি জ্বালিয়ে কল্যাণের ঝাড়বাতি।

তোমার ভেতরে তুমি কী জগৎ রেখেছো লুকিয়ে
বোধের অতীত? সেখানে কি গহন দুপর বাজে বাউলের
মৃদু একতারার ঝংকারে? সেখানে কি মুকুলিত
হতে চায় অসুস্থ গায়কের নিভৃত আকাঙ্ক্ষা কিছু?
যখন আমাকে কেউ এইমতো প্রশ্ন করে, আমি নিরুত্তর
আমার ভেতরে খুঁজি সালভাদর দালির ছবি।

এখন পরাস্ত ভূমি বলে
আমাকে খোঁচালে কেউ চিড়িয়াখানার বন্দি প্রাণীর মতন,
অপমানে বন্য ক্রোধে আমি কি উঠবো ফুঁসে
গোখরোর ছোবলের ক্ষমাহীন ভঙ্গিতে এখন?
অস্তমিত হোক ব্যক্তিগত ক্রোধ, থাকুক সতত অনির্বাণ
আমার ভেতরে পুণ্যবানের সংযম নিমগ্নতা।

একদা একটি সভাঘরে, মনে পড়ে,
একজন প্রাজ্ঞ, সৌম্য পুরুষ উদাত্ত কণ্ঠস্বরে,
শুনিয়ে ছিলেন কিছু কথা, যেন বাগানের সকল ফুলের
উদ্দেশে তন্ময় গল্প বলে মালী, পাথরের তিন ধরনের
বাক্যের পবিত্র পুষ্পে সাজিয়ে দিলেন সভাঘর।

বললেন তিনি
পাথরে বানানো যায় কালের থাবায় দৃঢ় দরদালানের
সারি, গির্জা আর মূর্তি হরেক রকম
আমি তাঁর সংকেতের আলোয় তন্ময় ওজু করে
আজো এই ব্যাপক আঁধিতে
পাথরে পাথরে শুধু প্রতিমাসবন্ধানী।