রাত দেরটায়

জামগাছের ডালটা তথাস্তু বলবার ভঙ্গিতে
ঝুঁকে থাকে বাড়ির ছাদে
আর জন্ম-জন্মান্তর পাড়ি দেয়া বাতাস দিব্যি হুটোপুটি
লাগিয়ে দেয় কার্নিশে। গলিতে
একটা মাতাল কার উদ্দেশে গালাগালের নর্দমা
বইয়ে দিলো, ঠিক বোঝা গেল না। দূরে
একটা কুকুর রাস্তাকে কেমন রহস্যময়
করে কাঁদতে থাকে একটানা করুন কাহিনীর মতো।

‘ওগো, তুমি আর ওসব ঝুটঝামেলায় যেও না,
আমার বড় ভয় করে। কী দরকার
একহাঁটু ধুলো ভেঙে
অজ পাড়াগাঁয়ে ঘুরে বেড়াবার না খেয়ে, আধপেটা
খেয়ে? খামোকা গলির মোড়ে মোড়ে
লোকদের সমাজ পাল্টাবার মন্ত্র জপিয়ে অথবা
সরকার বদলের ডাক দিয়ে
নিজেরই বিপদ ডেকে আনবার কী দরকার?
তোমার একটা কিছু হলে
আমরা বসবো পথে, এই সভেংচি ভাবনাকে
তুমি মোটেও আনো না আমলে। ওলো, তোমার পায়ে পড়ি,
আর তুমি যেও না মিটিং-এ মিছিলে’,-এই বলে
রোমানা শয্যায় স্বামীকে মেয়েলি মুদ্রায়
আলিঙ্গনে বাঁধে গার্হস্থ্য প্রেমে বুঁদ হয়ে।

তার, জাভেদের, মুখে এক ফালি হাসি ঝিকিয়ে ওঠে
কিন্তু সে মুখ খোলে না। রোমানার
চোখে ঢোখ রেখে ওর ঠোঁটে আলতো ছুঁইয়ে দেয়
তর্জনী। নারীর চোখ বুঁজে আসে, পুরুষের দৃষ্টি
পর্যটক নক্ষত্র-ভরা আকাশে। একদা যেখানে ছিল
ডুমুর গাছটা, এখন নেই, সেখানে
দৃষ্টি মেলে দিয়ে কী যেন ভাবছিল তার
নিঃসঙ্গতার মণ্ডলে ঘুরপাক খেতে খেতে।

হঠাৎ এই মধ্যরাতে এত জোরে দরজায় কড়া নাড়ে কে?
জাভেদ তড়াক করে চিতাবাঘের ধরনে লাফিয়ে ওঠে
বিছানা ছেড়ে, জানলা দিয়ে দ্যাখে বাইরে
ঘাপটি মেরে থাকা কালো ষাঁড়ের মতো
একটা পুলিশ ভ্যান। দূরের আকাশে তারামণ্ডলী
বর-ঠকানো আসর জমিয়ে
মিটিমিটি হাসছে আর জানলার ধারে
দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা ভাবছে
কী করে লকলকে-জিভ ডালকুত্তাদের চোখে
ধুলো দিয়ে নড়বড়ে পুরানো দেয়ালটা
টপকিয়ে আগামী বাংলাদেশের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে
মাথা উঁচিয়ে হেঁটে গিয়ে
শপথ নেবে শহীর মিনারে আবার নতুন করে।