রবীন্দ্রনাথের কাছে

আজকাল বাস্তবের ঝাঁ ঝাঁ রোদ থেকে সহজেই
স্বপ্নের ছায়ায় চলে যাই। সেদিন দুপুর বেলা
‘গীতবিতানে’র পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কখন যে
নির্জন সমুদ্রতীরে পা রেখেছি, বলা ভার। তটে সমুদ্রের
ওগরানো শঙ্খ থেকে ভেসে আসে কিন্নরের গান। হেঁটে যায়,
কখনও বাউল আমি কখনও বা ঐবাদুর; দেখি
সম্মুখে রূপালি সরোবর, তীরে বীণা আর হাঁস
আছে পাশাপাশি, দূরে শিমুল গাছের ছায়া পোহায় হরিণ।

পরের মুহূর্তে উদ্ভাসিত অপরূপ গুলবাগ,
যেখানে গৌরবে বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস,
শ্রী মধুসূদন দত্ত, লালন ফকির, নজরুল ইসলাম
এবং জীবনানন্দসহ তিরিশের কবিকুল
আর ছায়াপ্রায় কেউ কেউ উপবিষ্ট ক’টি রূপালি আসনে,
স্বতন্ত্র রবীন্দ্রনাথ স্বর্ণাসনে সমাসীন, তাঁর
মাথায় মুকুট। কবিদের সমাবেশ ঘিরে নক্ষত্রের নাচ
চলে, ঝরে শত পারিজাত।

সমাবেশ লক্ষ্য করে এগোতেই একজন দীর্ঘকায় লোক,
মুখ তার কাঠিন্যখচিত, বলে দৃঢ় স্বরে, ‘যাও,
চলে যাও, এখানে আসন নেই আর। বাধা পেয়ে খানিকটা
দমে যাই, ক্ষণকাল পরে নিজেকে সামলে নিয়ে, কণ্ঠে ঢেলে
অনুনয় বলি ‘আমি চাই না আসন কোনও, শুধু
এতটুকু ঠাঁই পেতে চাই তাঁর, রবীন্দ্রনাথের
উদার পায়ের কাছে, যদি তিনি অনুমতি দেন। অনুমতি
পেলাম কি পেলাম না, বুঝতে পারিনি শেষাবধি।
মেঘ এসে ঢেকে দেয় মুখ আর আমি
নিজের নিকট থেকে দূরে বহুদূরে চলে যাই। ভাসমান
দেহমনে কবেকার জলরোষ, ভগ্নতরী, শামুকের, জলজগুল্মের
ঘ্রাণ পাই। একটি গৈরিক আলখাল্লা কম্পমান
দিগন্তরেখায় ক্ষ্যাপা বৈশাখী হাওয়ায়, আত্মমগ্ন বংশীধ্বনি
আমাকে জাগিয়ে তোলে বলে মনে হয়।