শওকত ওসমানের জন্যে

এই মুহূর্তে দেখতে পাচ্ছি,
আপনি আহত
শার্দুলের মতো বসে আছেন
আপনার নিজস্ব বিবরে।
বাইরে এখন অন্ধকার গাঢ়
হচ্ছে ক্রমাগত, রক্তখেকো
নেকড়েগুলোর তৎপরতা
ভীতি সঞ্চার করছে
অনেকের মনে। আপনি
আহত, অথচ অন্তর্গত
রক্তক্ষরণ আপনাকে
অবসন্ন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
আপনি, অনুমান করি,
তাকিয়ে আছেন ঘরের
দেয়ালের দিকে,
যেখানে আপনার না-লেখা
পংক্তিগুলো মাঝে-মধ্যে
ঝিকিয়ে উঠছে, চক্ষুষ্মান
আপনি সহজে
দেখতে পাচ্ছেন কালান্তরের
অপরূপ অভিষেক।

আপনার জীবন এক অবিরাম
সংগ্রাম বাঁচবার
ক্লান্তি আর হতাশা যাদের
কুঁজো করে ফেলেছে তাদের
বাঁচিয়ে তুলবার। আপনি ইচ্ছে
করলেই
গোলাপের সুঘ্রাণে বুঁদ হয়ে
নক্ষত্রের গুঁড়ো সারা শরীরে
মেখে
কাটিয়ে দিতে পারতেন
অবলীলাক্রমে, কিন্তু যে
আপনি জীবনকে
দেখেছেন নানা মাত্রায়, বিভিন্ন
স্তরে,
তাঁর পক্ষে কী ক’রে সম্ভব
পদ্মভুক হ’য়ে থাকা? ক্ষুরধার
আপনার লেখনী, তার
আঘাতে
অন্ধকার কাতরাতে থাকে
পশুর মতো। আপনার
অক্ষরমালার দ্যুতিতে চোখ
ধাঁধিয়ে যায়
মধ্যযুগচারী লোকদের, ওরা
বুঝতেই পারে না
আপনার সীমাহীন অভীপ্সা,
আপনার স্বপ্নের বলয়ে
কী ঐশ্বর্য জ্বলজ্বল করছে!

এ দেশের প্রতিটি বিবেকী
মানুষ আপনার
রচনা সমূহের পক্ষে, হে
প্রেরণাসঞ্চারী অগ্রজ,
এ দেশের প্রতিটি সাহসী,
অগ্রসর মানুষ
আপনার সুদীর্ঘ জীবনের
পক্ষে, আপনার কাঁটার মুকুটে
ঝরুক পুষ্প বিকাশের সুর,
আমাদের কৃতজ্ঞ চিত্তের
আনন্দধারা।

২৮.১২.৯৪