সে আমাকে বললো

কেমন রহস্যময় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রয়েছি।
দোহাই তোমার
চুপ থাকো, পেরিয়ে এসেছি মেঘপথ, কতিপয়
নক্ষত্রের সাঁকো আর খবদ্দার তোমার চেয়ার ছেড়ে উঠে
এসে এই আমাকে ছুঁয়ো না
ভুল ক’রে লটের নারীর মতো নুনে তৈরি আমি।

তোমার কপাল থেকে খুব সহজেই
বেবাক কষ্টের দাগ মুছে
দিতে পারতাম,
এই যে তোমার চারপাশে অতিদ্রুত পরগাছা
গজিয়ে উঠেছে, লহমায়
সেগুলো উপড়ে ফেলে দূরে ছুঁড়ে দিয়ে
পা দোলাতে পারতাম ঝুল বারান্দায়। ইদানীং
তোমার উদ্দেশে যারা থুতু
ছিটোচ্ছে বিস্তর, সেই নিষ্ঠীবন ওদের আবার
চেটে নিতে বাধ্য করা সাধ্যাতীত নয়
আমার। তোমার যত ব্যর্থতার তাল তাল কাদা আশেপাশে
ছড়ানো রয়েছে
তা’ দিয়ে অনিন্দ্য এক প্রতিমা বানিয়ে দিন্দুকের
মুখে সেঁটে কুলুপ তোমার
সত্তা উদ্যানের
সুগন্ধি আভায় মুড়ে দেয়া কী এমন
কঠিন আমার পক্ষে? আমার কীর্তির বর্ণচ্ছটা সুনিশ্চিত
তোমাকে রাঙিয়ে দিতো স্বতন্ত্র সৌন্দর্যে হে প্রবীণ।

তোমার কালের
অনেক মেধাবী পুরুষের মগজের কোষে কোষে দিনরাত
নোংরা নর্দমার কাথ জমতে দেখেছি,
তোমার কালের
ভীষণ পতিতদের সকল ঋতুতে নেপো সেজে
দই মেরে যেতে দেখে দেখে
ক্লান্ত আমি তোমার কালের
বিখ্যাত পণ্ডিতদের চমৎকার লেজনাড়া
কেড়েছে আমার দৃষ্টি বার বার, যারা
মিথ্যাকে গয়নাগাঁটি আর শাড়ি কাঁচুলি পরিয়ে
জমকালো সত্যের আদলে ঝাড়লন্ঠন শোভিত
বাগান বাড়ির
নাচের আসরে দিব্যি নামায় মোচ্ছবে
মেতে ওঠে ইয়ার বক্সির সংগে, তাদের পিচ্ছিল ফিচলেমি
লক্ষ ক’রে বিবমিষা জাগে,
তোমার কালের বাছা বাছা
পতিত কবিরা
যখন পুরানো সারিন্দায় স্বৈরাচারী নায়কের
ঝলমলে সব বুট পালিশের বসন্তবাহার
বাজায় সোৎসাহে, বেলেহাজ
সেই উম্মত্ততা দেখে উম্মাদেরও নিছক লজ্জায়
মাথা হেঁট হয়ে যায়।

না, আমাকে স্পর্শ করবার চেষ্টা তুমি
করো না কখনো,
কেননা এখনো আমি ভূমিষ্ঠ হইনি, তবু বলি
একদিন তেজস্ক্রিয় ছাইয়ের গাদায়
তলিয়ে যাবার আগে পৃথিবীর নিসর্গ নারীর
জয়গান গেয়ে যেতে পারি
যাকে পেলে তোমার বয়েসী বুক হাওয়ালাগা পালের মতন
স্ফীত হতো গৌরবে, আমি সে
অজাত আত্মজ
তোমার দাঁড়িয়ে আছি রহস্যের মসলিন ঢাকা।