সে এক বাঁশিঅলা

এই যে এখন গভীর রাতে প’ড়ে আছি
বেঘুম খাটে বড়ই একা, কিসের জন্যে? চতুর্দিকে
দেখছি কেন কাদামাখা অনেক হাড়ের নাচানাচি?
কেন আমার চোখের ভেতর এলোমেলো কাঁটা গজায়
এই প্রহরে? দেয়াল জুড়ে কত কী-যে উঠছে ফুটে-
কিছু চিনি, কিছু আমার অচেনা খুব। ছায়াবাজি চলছে যেন
বন্ধ ঘরে মধ্যরাতে। বুকের মধ্যে কালো জালে
আটকে-পড়া ব্যথিত এক পাখি কাঁদে নিঝুম সুরে।

এই তো দেখি আমার দিকে হাত বাড়াল নিরিবিলি
কে যেন খুব স্নেহভরে; কিন্তু এ কী হাতের কোমল
মুদ্রা উধাও সাইকেডেলিক গোধূলিতে। আমার কথা
করুণ স্বরে ইতস্তত ঘোরে ফেরে; হাতের চেটোয় নেচে ওঠে
আশরফিরা, হারায় আবার ধূলিঝড়ে, জানালাটায়
বাদুড় এসে ঝুলে থাকে, ক্যাকটাসে হায় আগাগোড়া
ঘর ছেয়ে যায়। উড়োপুড়ো মনে আমার এক্কেবারে
কয়লা খনির আঁধার-ছেঁড়া হীরে জ্বলে যখন তখন।

এই তো আমি বয়েসী এক কেমন মানুষ মনে প্রাণে
সমর্পিত পদ্য লেখায়, মনপাতালে
পুরোপুরি ছন্নছাড়া, স্বপ্ন কত গড়ি ভাঙি, আবার গড়ি।
পাহাড়ে কেটে নয়া নহর সৃষ্টি করি, খোলামেলা
সাঁতার কাটি গহীন গাঙে, পাতাল থেকে তুলে আনি
মুঠোয় ভ’রে রত্ন কিছু। সমুদ্দুরের জল ছিটানো
রূপসীদের সঙ্গে কত ফিস্‌ফিসিয়ে কথা বলি,
প্রায়শ এই ছোট ঘরে জ্বরের ঘোরে হিজিবিজি কীসব বকি।

লোকে বলে, আমার মাথায় বিপজ্জনক ভাবনাগুলো
বসত করে মৌমাছিদের মতই আজো। কুয়োবাসী সবার কাছে
আমি বটে চোখের বালি, ওরা কেবল কুৎসা রটায়
আমার নামে হাটে মাঠে। যে বাঁশিতে ফুঁ দিলে রোজ তরুণেরা
ঢেউয়ের মতো ছুটে আসে আমার দিকে, সে বাঁশিটা
শক্র ওদের ব’লেই সেটা বিনাশ করার ঘন কালো যজ্ঞে মাতে।
আমার বাঁশি ঘাসে ঘাসে রোদের ঝিলিক, মেঘনা নদীর
ঝোড়ো বুকে ঢেউয়ের গান, আমার বাঁশি আকাশ জোড়া রঙের সাঁকো।

২.৫.৯৭