সেই ছায়াবৃতা

যেদিন তোমাকে দেখি চারতারা হোটেলের
লবির সোফায় এক গোধূলি বেলা,
নিমেষে আমার বুকের মধ্যে ক্যামেলিয়ার জাগরণ,
আমার করোটির ভেতর কোকিলের কুহু ডাক, আমাকে ঘিরে
নক্ষত্রের নাচ, সরোবরের রূপোলি জল
আমার হৃদয়ের তুন্তুজালে শিহরণ। সৌন্দর্যের সজীব স্থাপত্য তুমি।

কী করে যে কাঁটাতারের বেড়া আমি
টপ্কে প্রবেশ করলাম তোমার মোহন উদ্যানে,
নিজেই জানি না। তোমার চোখের অতলতায়
স্নান করে আমার চেতনা এবং
দেখি, আমার সামনে তারার কাঁকরে গড়া পথ,
তোমার হৃদয় হাত বাড়াল আমার হৃদয়ের দিকে।
সেই পথ বেয়ে চলছি আমরা দু’জন। আমাদের
স্বাগত জানায় দু’ধারের সারি সারি প্রহরীপ্রতিম গাছ,
আমাদের ক্লান্তি ধুইয়ে রঙ বেরঙের পাখির গীতধারা,
দেবদূতদের পুষ্পবৃষ্টিতে স্নাত হই আমরা। তোমার
মুখ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারি না
মুহূর্তের জন্যেও। কী এক জ্যোতি লতানো তোমার সত্তায়

বহু বছর আগে থেকেই ভাবনায় দেখে আসছিলাম
এক প্রতীক্ষারতা নারীকে,
যার পিঠে এক ঢাল দীঘল কালো রেশমি চুল। ছায়ায়
ডোবা ওর মুখ। দূর থেকে দেখা স্বপ্নের সেই নারীর

আবছা রূপ আমি ভেবেছি, খুঁজছি বহু বছর ধরে
খোলা রাস্তায়, পাকদণ্ডিতে, ঝর্নার ধারে, কুয়োতলায়,
শহরে ফ্ল্যাটে; তোমাকে প্রথম দেখেই মনে হলো-
এই নিঃসঙ্গ মুখ আমি খুঁজে বেড়িয়েছি জন্ম-জন্মান্তর।

তুমি এভাবে তাকালে আমার দিকে,
যেন তোমার দু’টি চোখ সেই বালিকা বয়স থেকে
অনলস আরাধান করে আসছে
আমার উপস্থিতির এবং আমি
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আসছি তোমারই ব্যাকুলতায়
বলয়ে, তোমারই সত্তার অমিয় ধারা পান করার জন্যে।

আমার স্বীকারোক্তি শোনো,
তোমাকে দেখার পর থেকেই সেই বহুকাল ধরে ভাবনার
ছায়ায় ডোবা স্মৃতিবিস্মৃতি ছড়ানো
দীঘল চুলের নারী বিদায় নিয়েছে আমার ভাবলোক থেকে
তাকে হারিয়ে আম বিষাদের চত্বরে ঘুমাই না;
কেননা সেই ছায়াবৃতা তোমার মধ্যেই পেয়েছে সম্পূর্ণতা।

১০.১০.৯৪