সেই কবে থেকে

কখনো পিতার চোখে টলটলে জলের বুদ্বুদ
দেখি নি আমরা কেউ। মনে পড়ে, একদা সন্ধ্যায়
বারান্দায় পোষা পাখিটার শূন্য খাঁচার সম্মুখে
দাঁড়িয়ে বিষণ্ন তাঁর তৃতীয় পুত্রকে বললেন
‘ছি কাঁদে না! পুরুষের চোখে কান্না বড্ড বেমানান।

তখন পিতাকে ঠিক নূহের মতোই হয়েছিল
মনে, যেন অতিদূর দিগন্তের বুড়ি ছুঁয়ে ফের
সপ্তম পায়রা তাঁর প্রতীক্ষা-কাতর হাতে এসে
বসবে সবুজ ঠোঁটে, চোখ তাঁর নির্মেঘ দুপুর।

প্রিয়তম পুত্র তাঁর অর্থাৎ কিশোর সুলেমান
মড়কের দাবাগ্নিতে চিরতরে হারালো যেদিন,
সেদিন সে ধীরোদাত্ত পুরুষের পাঁজর-খাঁচায়
কী শূন্যতা করেছিল দাপাদাপি বুঝতে পারি নি।
সেদিনও পিতার চোখ ইতিহাস বইয়ের পাতায়
দেখা কোন মূর্তির চোখের মতো হয়েছিল মনে-
কেমন সুদূর আর শুক্‌নো বড় বেশি নিষ্পলক।
কখনো পিতার চোখে টলটলে জলের বুদ্বুদ
দেখি নি আমরা কেউ। গতায়ূ পুত্রের কুকুরটা
যেদিন উঠোনে রইলো পড়ে স্তব্ধ, নিঃসাড় কঠিন,
‘সুলেমান’ বলে পিতা আর্তকণ্ঠে এলেন বেরিয়ে
ঘর থেকে বেসামাল। আজো দেখি, সমস্ত শরীরে
পুরোনো ফটোগ্রাফের বিবর্ণতা নিয়ে তিনি কালো
উঠোনের মাঝখানে মুষল বৃষ্টিতে নগ্ন পায়
সেই কবে থেকে ভিজছেন, ভিজছেন, ভিজছেন…..