স্বদেশে ফেরার পর

তিন মাস পর শ্যামলীর গলিতে ঢুকতেই
মনে হলো রাধাচূড়া গাছটা তরুণীর মতো হেসে উঠল
শরীর ঢেউ তুলে। গোলাপের নার্সারি জানালো অভিবাদন,
কয়েকটি গোলাপ লাফিয়ে আমার বুকে মাথা রাখতে চাইল
গভীর অনুরাগে। একটু এগোতেই আমার
বসতবাড়ির পেয়ারা গাছ স্বাগত ভঙ্গিতে
আমার দিকে বাড়িয়ে দেয় হাত। ওর পাতাগুলো
আমাকে জড়িয়ে নেয় সংলাপে। পেয়ারা গাছ আর আমি
পরস্পর কথা-স্রোতে ভাসি, যেমন দুই কবি। আমার উদ্দেশে
অনাবিল আনন্দে হৃদয় খুলে ঘর-দুয়ার।

নিঃসঙ্গতার চোরাবালিতে ডুবতে-ডুবতে লক্ষ করি,
দোতলায় ওঠার সিঁড়িগুলো বহুদিন
অপেক্ষায় ছিল আমার। অধীর আগ্রহে একে-একে
ওরা সবাই আমার পদচুম্বন করে। কৃতজ্ঞচিত্তে ওদের দিকে
তাকাতে তাকাতে দেয়ালের ফটোগ্রাফগুলোর
আদর কুড়িয়ে, আপনজনের বিকশিত আনন্দে ডুব সাঁতার কেটে
প্রবেশ করি নিজের ঘরে, যেখানে অপেক্ষমান
আমার লেখার টেবিল, বুক শেলফ আর
পুরনো দিনের বিশ্বস্ত এক চেয়ার। কয়েকটি নতুন সোফা
আমাকে দ্যাখে উৎসুক দৃষ্টিতে আপন করে নেওয়ার
তীব্র ইচ্ছায়। আমি আমার কবিতার খাতার মুখ চুম্বন ক’রে
ওর অন্তরের ঘ্রাণ নিই বার বার।

আমার ভেতরের নিভৃততম সত্তা
কিছুক্ষণ কল্পনার নুড়ি কুড়ায়, এক পেয়ালা চা খেতে খেতে
বাইরের দিকে চোখ মেলে তাকায় আর ভাবে
যার প্রতিটি হৃৎস্পন্দনে আমার স্মৃতি, স্বপ্ন, বর্তমান
এবং ভবিষ্যৎ ঢেউয়ের প্রদীপের মতো জ্বলে, দোলে
সে এখন তার অনুপস্থিতিকেই এখানে জাজ্বলমান করে রেখেছে।

১/১১/৯৫