শকুন, নেউল আর কঙ্কালের সহবতে

এমন আদিম নিস্তব্ধতা আমার অভিজ্ঞতার আওতার
পরপারে; এটা কি শ্মশান নাকি গোরস্তান সুনসান? এই
জ্যোৎস্নাময় মধ্যরাতে আমি কি নিঃসঙ্গ পড়ে আছি
খাপছাড়া বিষণ্ণ ভাগাড়ে? কিয়দ্দূরে
একটি কি দুটি লোভাতুর শবাচারী
শকুনের পদচারণায় ঈষৎ শিউরে উঠি, চোখ দুটি
অজান্তেই বুজে আসে। ক্ষণকাল পরে
গলায় কিসের যেন স্পর্শ অনুভূত হয়। চোখে পড়ে
আমার গলার দিকে এগুচ্ছে ক্রমশ
জীর্ণ শীর্ণ পাঁচটি আঙুল-কোনও মতে ভয়াবহ
আঙুল ক’টিকে দূরে ছুঁড়ে দিই এক ঝটকায়; উঠে
পড়ি স্যাঁৎসেঁতে সেই মাটির বিছানা থেকে। পদযুগ টলে।

শকুনেরা কী এক অদ্ভুত স্বরে হেসে স্তব্ধতাকে
ঠুকরে ঠুকরে মৃত বাছুরের শরীরে দাঁড়িয়ে
পরমুহূর্তেই ধেই ধেই নেচে ওঠে। নৃত্যপর মুখগুলো বাছুরের
নরম, করুণ মাংসে ভরে ওঠে। কোথায় পালাবো
এই, বলা যেতে পারে, ভূতুড়ে জায়গা থেকে, কিছুতে পাই না
ভেবে, শুধু বোবা হয়ে থাকবো এমন এতকাল?
কতকাল শকুন, নেউল আর কঙ্কালের সহবতে কাটাবো জীবন?
কতকাল বাগানের সুঘ্রাণ এবং সুন্দরের সান্নিধ্যের
আভা থেকে থাকবো বঞ্চিত? কতকাল কবিতার
মাধুর্য আমার বোধে সঞ্চারিত হবে না, কে ব’লে দেবে এই
পীড়িত, দলিত লোকটিকে, যাকে আমি
নিজেরই ফতুর সত্তা ব’লে জানি, যার হাহাকার, ধু-ধু দীর্ঘশ্বাস
মাথা কুটে মরছে বুভুক্ষু বিরানায়? আমার এ নিশীথের
প্রহরে নিজেকে বড় বেশি আজগবি মনে হচ্ছে প্রতিক্ষণ।

যদি ফিরে যাই এ মুহূর্তে নিজ চেনা বাসগৃহে, তা’হলে কি
আমার আপনজন এ-আমাকে করবে গ্রহণ
নিজেদের কেউ ব’লে? না কি সন্দেহের অমাবস্যা
তাদের করবে বাধ্য আমাকে নির্ঘাৎ সঁপে দিতে
উৎপীড়কের হাতে। অসহায় দিগ্ধিদিক তাকাবো নির্বোধ
দৃষ্টি মেলে, যেন আমি নির্বাক বৃক্ষের সহোদর!

১২-৩-২০০৩