স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে

নক্ষত্রেরা মধ্যরাতে নৃত্যপর লোকটার নগ্ন আঙিনায়,
অপরূপ নৃত্যকলা তাকে পুরু শয্যার আরাম থেকে টেনে
নিয়ে আসে নক্ষত্রেরা মদির আলোয়। লোকটার চোখে,
শরীরে, হৃদয়ে জ্যোৎস্নাপ্লুত নেশা ধরে, সত্তা তার
ক্রমাগত নৃত্য হয়। লোকটা বয়সী বেশ, অথচ এখন
বয়সের ছাপ যেন ঝরে গেছে নক্ষত্রের গহন চুমোয়।
প্রত্যুষে নিঝুম আঙিনায় ক্লান্ত সে পুরুষ অচেতন, একা
পড়ে থাকে; শিশিরের ফোঁটাগুলো লেগে থাকে ঠোঁটে,
সাদা চুলে এবং ভুরুতে। কেউ তাকে জাগাবে না,
সম্ভবত এরকমই হয়ে থাকে মাঝে মাঝে, মনে হয়। যখন মেলবে
চোখ মিট মিট করে, রোদের ঝালর তাকে স্তব্ধ কলরবে
পৌঁছে দেবে প্রশান্তির দীর্ঘ ঘাটে, চাপা
হাসির আড়ালে বেদনার্ত মেঘ ভেসে
বেড়াবে অক্ষরবৃত্ত ছন্দে, উপোসের কাল দীর্ঘতর হবে।

অসুস্থ সে বহুদিন থেকে, তবু নক্ষত্র-খচিত এক ঘোড়া
তাকে পিঠে নিয়ে তরঙ্গিত নদী পার হয়, মেঘে মেঘে উড়ে
বহুদূরে চলে যায়, খুরের আঘাতে
খুলে যায় হীরার কপাট, তেজী ঘাড় নিয়ে সুন্দর দাঁড়ায়,
কত প্রতিশ্রুতি জ্বলে দু’টি চোখে। ক্ষণকাল পরে
অন্বেষী, উৎসুক সওয়ারকে নিয়ে যায় এক প্রাচীন প্রাসাদে,
যেখানে অপেক্ষমাণ অনেক রহস্যময় পাণ্ডুলিপি,
যারা শুদ্ধ পাঠ আশা করে পথ চেয়ে
রয়েছে নিশ্চুপ, কত যুগ ঝরে গেছে
তাদের অস্তিত্ব ছুঁয়ে। আচানক স্বপ্ন থেকে জেগে ওঠে অসুস্থ মানব।

শহর এখন কুয়াশার চাদর জড়িয়ে গায়ে বসে আছে
আফিমখোরের মতো। অসুস্থ লোকটা
ভীষণ কাশছে বসে কাঠের চেয়ারে, আশেপাশে নেই কেউ,
মাথার ভেতরে তার ভ্রমরের গুঞ্জরণ, মাঝে মাঝে বুকে
মাথা তোলে সূঁচের পীড়ন। লোকে বলে, যেজন জ্বরের তাপে
বকছে প্রলাপ ঘরে কী এক অজানা ঘোরে আর
শারীরিক ঝড় বেড়ে গেলে, যেন কোনও প্রতিশ্রুতি
মনে পড়ে গেল, এই ভেবে তাড়াতাড়ি
খাতার পাতায় দ্রুত নিবিড় ফুটিয়ে তোলে বকুল, গোলাপ;
অনেকেই সেই সৃজনের লীলা দেখে নিজেদের
কথোপকথনে সিদ্ধান্তের আলো জ্বেলে বলে-
অসুস্থতা, ভাবতে প্রলুব্ধ হই, প্রতিভার গূঢ় জন্মভূমি।

২০.১১.২০০০