শোভাযাত্রা

হেমন্ত বিকেলে আমি বেশ্যাদের শোভাযাত্রা দেখে
আরো বেশি কৌতূহলী হই জীবনের রূপায়ণে।
নিশীথে কন্যারা এই পড়ন্ত বেলায় হেঁটে যায়,
ওদের শরীরে নগ্ন হাওয়া বিষণ্ন লেখে।

খুব কাছ থেকে দেখি গণিকার নগর ভ্রমণ;
স্বেদচিহ্ন দেখি না কোথাও আপাতত, কী কৌশলে
লুকিয়ে রেখেছে ওরা পৃথিবীতে জীবন-যাপন
করার দির্বেদ আর পাতালের জন্মান্ধ পীড়ন।

সমাজপতিরা দ্রুত ব্যাঙ্কনোট গুণে স্নানাহার
সেরে চুলে সুদূর আলালীটেরি কেটে ফুরফুরে
পাঞ্জাবির অন্তরালে সীল মাছের মতন দেহ
ঢেকে দূর থেকে করে ব্যবহার বাইনাকুলার।

বেশ্যাদের শোভাযাত্রা আস্তে সুস্থে একটি সফেদ
ঘোড়ার নেতৃত্বে চলে, ক্রমশ এগোতে থাকে। দূরে
অমৃতের ভান্ডে মাছি ওড়ে, ক’জন ধাঙড় ঢোল
বাজায় সূর্যাস্ত পান ক’রে, সমস্ত শরীরে জমে স্বেদ।

সুন্দর সুন্দর ব’লে ওরা সেই শোভাযাত্রাটিকে
মদালো রঙিন চোখে জানায় স্বাগত। দেয় পেতে
আসন উঠোনে, তাম্বুলের রঙ আনে আচরণে,
অবৈধ সৌন্দর্য চর্চা করে ক্ষণস্থায়ী অলৌকিকে।

অকস্মাৎ কারো মনে পড়ে ওপ্টেনের ঘ্রাণ আর
কেউ বনশিউলীর গন্ধ মনে ক’রে দীর্ঘশ্বাস
ফেলে, এরা কেউ সাড়ে তিন হাত সোঁদা নির্জনতা
পাবে না, পাবে না বুঝি চন্দর কাঠের সত্তাসার।

নিবিড় গোধূলিপায়ী বেশ্যাদের শোভাযাত্রা গাছে,
ফুটপাতে, দোকানের উল্লোল শো-কেসে রেখে যায়
নোনা মায়া, শোভাযাত্রা শবদাহ-স্মৃতিসম্বলিত
কাপাস তুলোর মতো উড়ে যায় কবিতার কাছে।