সহমর্মী

বিকেল পুরোনো বেনারসীর
মতো মৃদু জ্বলজ্বলে।
এরকম সময়, যখন অবসাদ
দিনের আঁচলে জড়িয়ে থাকে,
আমার চায়ের তৃষ্ণা
বেড়ে যায়। তখন আমি
সচরাচর পর পর
দু’কাপ চা খাই; আজ
দ্বিতীয় কাপের চা টুকু শেষ
করার
সময় লক্ষ্য করি, বিলীয়মান
দিনের আভায়
পিরিচে রাখা বিস্কুটগুলো যেন
বাদশাহী আমলের আশরফি
আর আকাশে দুলছে ঢেউয়ের
পিদিমের মতো পাখির ঝাঁক।

দূরগামী পাখির বুক আমাকে
জীবনের বিশেষ কোনো
রহস্যের প্রতি উৎসুক করে
তোলে। আমার
জৈবিক তৃষ্ণা হয়ে যায়
মননের ক্ষুধা। গতকাল
কুরিয়ার সার্ভিসে আসা চিঠির
অনুপম এক শব্দগুচ্ছ আমার
বুকের ভেতর কখনো
ফুল ফোটায়, কখনো তারা,
কখনো-বা গ্রীষ্ম দুপুরে এক
ঝলক
ঠান্ডা হাওয়ার মতো বয়ে যায়
আমার সত্তায়।
শব্দগুলো আমাকে অনেক্ষণ
বন্দী করে রাখে
এক অলৌকিক পুষ্পিত
কারাগারে। সেই বন্দীদশা
ঘোচাতে
অনিচ্ছুক আমি চোখের সমুখে
শব্দগুচ্ছের প্রতিমা ছাড়া
কিছুই দেখি না।

দেকার্তের ‘আমি চিন্তা করি,
তা-ই আমি আছি’
বাক্যটির
অনিবার্যতা মান্য করে আমার
চিন্তায় যিনি সর্বেশ্বরী,
তাকে উপমার, অলঙ্কারের
আড়ম্বরের
ওপারে রেখে হৃদয়ের
কিংবদন্তী রচনা করি। চোখ
বুজলে দেখি
সঙ্ঘবদ্ধ কাদাখোঁচাদের
পীড়নে
কোকিলের কণ্ঠরোধ হয়ে
আসে, গলা চিরে বেরোয়
রক্তধারা। আমি আহত
কোকিলটিকে কাদাটে ঝোপ
থেকে
কুড়িয়ে নিয়ে তার শুশ্রূষার
ভার দিই
গাছের সতেজ পাতা, ফুলের
পাপড়ি, সরোবরের জল,
জোনাকি আর নক্ষত্রের
উপর। কোকিল
আমার দিকে তাকায় সুহৃদের
দৃষ্টিতে। তাকে আমি কেন
জানি
নিজের ভেতর ধারণ করি
প্রাতঃস্মরণীয় শ্লোকের মতো।

২২.৩.৯৪