সমাধি ফলক

মনে হয় খুব কায়ক্লেশে
কাঁটা গুল্মময় বহু দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এখন
দাঁড়িয়েছি উদাসীন গাছের ছায়ায়। সে গাছের
ডালে রঙ-বেরঙের পাখি
আছে, আছে ফলমূল আর পাতার আড়াল থেকে
গোপন ঝরনার মতো ঝরে গান, যেন
সুদিনের তান বয়ে যায়। গোধূলিতে মনে হয়
কল্পনার গ্রামে
ডানাঅলা ঘোড়া নামে মহাশ্চর্য ফসলের লোভে,
ছোটে দিগ্ধিদিক, ক্রুর খুরের আঘাতে
কত যে প্রতিমা
ধুলায় গড়ায়, তপ্ত নিঃশ্বাসে ওদের
পুড়ে যায় ঘর গেরস্থলি। পারে না ওদের মুখে
লাগাম পরাতে কেউ।

বড় একা লাগে এই গাছের ছায়ায়। বারংবার
ব্যাকুল রুমাল নাড়ি, যদি কেউ আসে, এসে যায়
এখানে, অথচ কারো পদশব্দ শুনি না কোথাও
আশপাশে। নতুন শাড়ির
খসখসানির মতো শব্দ হলে ঝরা পাতাদের
ভিড়ে কান পাতি, ভাবি এই
এল বুঝি দুর্গম পথের সাথী কোনো। কিন্তু কেউ
প্রকৃত দেয় না সাড়া। শুধু ছায়া-অবছায়া ছাড়া
এখনো কিছুই নেই আর, মনে হয়। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে
পাঁশুটে জ্যোৎস্নায়
হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ি ভবঘুরে উদ্বাস্তুর মতো!

স্বপ্নের চত্বরে দেখি পড়ে আছে লাল মখমলে
কোষবদ্ধ তরবারি, বঙ্কিম, প্রাচীন আর নিঃস্ব কৃষকরা
সুগন্ধি সাবান মেখে আপাদমস্তক
ভুস্বামীর জ্বলজ্বলে বেশ পরে নেয় ক্ষিপ্র প্রতিযোগিতায়।

স্বপ্নের ভেতরে
অনেক অনেক লোক নতজানু নদীতীরে, বিধ্বস্ত বাগানে,
পাথুর সিঁড়িতে, চৌরাস্তায় বটমূলে,
বকুল তলার আর অলিতে গলিতে। অকস্মাৎ
অনেক মুখোশ খুলে পড়ে
দুরন্ত হাওয়ায়। রাগী পদাতিক উদ্ধত ঘোড়সওয়ার দ্রুত
আমাকে মাড়িয়ে যায়, হাজার হাজার ওরা করে তছনছ
স্বপ্নের মতন সব সম্পন্ন বাজার। পড়ে থাকি
রক্তিম ধুলোয় আমি অত্যন্ত একাকী,
যেন মনস্তাপময় হু হু এক সমাধি ফলক।