সোনার মূর্তির কাহিনী

একটি সোনার মূর্তি দেখি মেহগনি বাক্সটির
তালা খুলে কারো সহযোগিতাবিহীন
সহজে বেরিয়ে আসে এবং সম্ভ্রমবোধে সব
গাছপালা নত হয়, দশদিক থেকে অবিরত
ফুল ঝরে। সেই মূর্তি কিছুক্ষণ শরণার্থীদের
ভিড়ে মাথা নেড়ে, নিষ্পলক তাকিয়ে তাঁবুর চৌহদ্দিতে,
ঘুমে কাদা সান্নাটা বস্তির
আশে পাশে ঘুরে, কিছু প্রাক্তন বিবর্ণ ভোটকেন্দ্র, পৌরসভা,
চলে যায় প্রধান সড়কে।
সোনার মূর্তিটি
কখনো আমার কাছে কমলালেবুর রস চায়,
কখনো বা আমার হাতের
চেটোয় সহজে তুলে দেয় কিছু সুকান্ত অক্ষর,
যেমন নিপুণ যাদুকর চকচকে মুদ্রা দেয়
মন্ত্রমুগ্ধ দর্শকের হাতে।
মোবারক মিস্তিরির ঘরে
সেই কবে থেকে লাশ পড়ে আছে একাকিনী, তাকে
বাস্তুসাপ স্নেহ করে আপাদমস্তক,-
মোবারক মেথর পট্টিতে খুব যাচ্ছে গড়াগড়ি
বেসামাল খেলনার মতো। পাঁশুটে চান্নির পানি
ভেঙে ভেঙে
নিঃসঙ্গ সোনার মূর্তি একবার লাশের নিকটে,
একবার মিস্তিরির কাছে যায়।
আমাদের এই প্রিয় শহর নিশুত রাতে আজ
আত্মহত্যা করবে নিশ্চিত ব’লে এক
উলঙ্গ উম্মাদ হেঁকে যায়
অলিতে গলিতে, তার চুলের জটায় মোরগের পালকের শোভা,
সে-কথা তোলে না কেউ কানে;
উম্মাদ কেবলি মাতে পুনরাবৃত্তিতে-
চায়ের ক্যান্টিন ছেড়ে বুড়িগঙ্গা নদীর কিনারে চলে যেতে
তার কোনো দ্বিধা নেই,
এবং যুবক-যুবতীরা শ্লিপিং পিলের গাঢ়
অভিজ্ঞতা মেনে নেয়
অবলীলাক্রমে আর বুড়োরা ভীষণ কাশে,
ক্রমাগত ওগরায় প্রবীণ গয়ের,
সোনার মূর্তিটি রোবটের ভঙ্গিমায় লোকালয়ে
করে পর্যটন।

প্রকৃত মানুষ নয়, কতিপয় কর্কশ শকুনমুখো লোক
আমাদের জাতীয় পতাকাটিকে ঠোকরাচ্ছে সকল সময়।
এই মতো দৃশ্যাবলি দেখে
এই দশকের প্রমেথিউসের হাত
শেকল ছোঁড়ার গানে সঞ্জীবিত হয় পুনরায়।
সোনার মূর্তিটি
আমার উদ্দেশে অকস্মাৎ কিছু শ্লোক
উদাত্ত আবৃত্তি করে, যেন রত্নাকর
দস্যুর ভরাট কণ্ঠে বাল্মিকীর স্বর, নবজাত, অনশ্বর।
আমি শুধু, বিশ্বস্ত স্টেনোর মতো উচ্চারিত বাণী
টুকে নিই নোটবুকে, দেখি
মূর্তিটি গলতে থাকে, গলে গলে হয় লাভাস্রোত।