টেবিলের আপেলগুলো হেসে ওঠে

যখন সে তরুণ শিক্ষার্থী ফিরে আসে
তার ঘরে টেবিলে আপেলগুলো হেসে ওঠে, ক্ষুধিত পাষাণে
যেরকম হাসির বর্ণনা আছে, ঠিক
সেরকম। রাত্রির আকাশে
চোখ রেখে নক্ষত্রের টানে
আকাশ পাতাল ভাবে, স্বপ্নাংশের মতো চিকচিক
করে কিছু দূরে, মনে হয়। যখন সে বই খুলে
বসে, ভুলে যায় মর্মমূলে
কাঁটার পীড়ন, প্লেটো কিংবা হাইডেগারের বাণী
নিয়ে মাতে, তখন ‘বোরিং’
বলে আপেলেরা পরস্পর করে হাত টানাটানি
কিছুক্ষণ, তারপর ঘুমে ঢুলে পড়ে,
শিক্ষার্থীর আঙুলের রিং
ফড়িং-এর মতো উড়ে গিয়ে অকাতরে
খয়েরি পর্দায় বসে, টেবিলে আপেলগুলো হঠাৎ আবার
জেগে হেসে ওঠে, চমকিত সে তাকায়,
একটি আপেল তুলে নিয়ে হাতে করে লোফালুফি।

কেউ কি দাঁড়িয়ে আছে খোলা দরজায়?
আস্তে হেঁটে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে চুপি চুপি
চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে, চোখে ঘুম
নেই এক ফাঁটা, হু হু বুক কেন এমন নিঝুম?
লালচে আপেলগুলে তাকে প্রান্তরের উপকথা,
সম্রদেতীরের কিছু কাহিনী শোনাতে চায়। তার নামহীন
মন নেই আপেল ও প্রতিশ্রুত বাগিচার প্রতি, নামহীন ব্যাকুলতা
দখল করেছে তাকে এবং ক্ষুধিত পাষাণে অন্ধকার,
মনে হয়, ঘিরে থাকে
সারাক্ষণ তাকে।

দিন তার কেটেছিল বন্ধুদের চায়ের আসরে।
কারা রাজনীতির বাসরে
প্রধান ভূমিকা নিয়ে জটলা পাকায়, কারা কবিতায়
হেজে-যাওয়া মান্দাস ভাসায়,
এ নিয়ে তুমুল
তর্কের তুফান উঠেছিল। কার পাকা ধানে কারা
দিচ্ছে মই যখন তখন; অবক্ষয়, অধঃপাত, যৌথ ভুল
ইত্যাদিতে ইদানীং অধ্যাপক-পাড়া
কী রকম মশগুল, বৃদ্ধিজীবীদের মগজে কতটা ঘুণ
করেছে প্রবেশ, তার কড়চায় হয়েছে হেসে খুন।
টেবিলে আপেলগুলো হেসে ওঠে জ্যোৎস্না-ঝলসিত
ঝর্ণার ধরনে বারবার।

এখন ঘুমোতে যাবে,
ভাবে
তরুণ শিক্ষার্থী; অথচ সে কেন ভীত
শুতে যেতে বিছানায়? শবাধার
বলে মনে হলো কি শয্যাকে তার? নাকি
আপেলের হাসি শুনে কবেকার পাখি,
ভীতির দোসর, এসে ঠোকরাচ্ছে তাকে?
অকস্মাৎ দু’হাতে সে তীব্র মুখ ঢাকে।
বাইরে বেরিয়ে যেতে চায় সে কোথাও দূরে দিকচিহ্নহীন;
কে এক প্রহরী প্রস্থানের পথ আগলে দাঁড়ায়।
বাদ-প্রতিবাদ ধ্বস্তাধ্বস্তি চলে; হাওয়ায় বিলীন
হয়ে যায় পরাভূত সে প্রহরী, তরুণ শিক্ষার্থী পা বাড়ায়,
আস্তে সুস্থে অজানার দিকে আর গভীর আত্মিক
যন্ত্রণায় কায়ক্লেশ ভুলে
আশ্চর্য সাহসে ফ্যানে ঝুলে
পড়ে আর টেবিলে আপেলগুলো কেঁদে ওঠে ঠিক
সেরকম, যেরকম ক্ষুধিত পাষাণে
ঝরে পড়েছিল পাথরের বুক থেকে রূপসীর, পাঠকেরা জানে,
কান্নার শিশির।