তার খাতা

লোকটার ঢের বয়স হয়েছে, শরীরে দু’তিনটে রোগ বেশ
জাঁকিয়ে বসেছে। থাকে সে এই শহরের একটি গলির
ভেতর এক কোণে, নিরিবিলি। সামাজিকত টানে না তাকে।
পাড়ার কারও সঙ্গেই ওঠা বসা নেই। সে যে আছে
এখানে, এ-কথা পাড়ার পাঁচজন দিব্যি ভুলে থাকে।
মাঝে-মাঝে দূর থেকে অবাক হ’য়ে দেখে লোকটাকে।
হয়তো ওকে নিয়ে কখনও সখনও ওদের মধ্যে খুচরো আলাপ
চলে কিছুক্ষণ। সে কান পাতে না কারও কোনও কথায়।

লোকটা নাকি ভাসমান মেঘ, গাছের সবুজ পাতা,
ঘাস, পিঁপড়ে, পাখি, মধ্যরাতের রাতা, রোদ্দুর
আর বৃষ্টিধারার সঙ্গে কথা বলে। একবার একজন
তরুণীকে সে নাকি আচমকা বলেছিল, ‘আপনার
শরীরের নিম্নাংশ অবিকল মৎস্যকন্যার মতো।’
তরুণী চমকে উঠে দূরে সরে গিয়েছিল। তারপর
সারা ঘরে ফিসফিস, হাসির হুল্লোড়। ব্যাপারটা
হাসির খোরাক হবে, লোকটা ভাবেনি। একজন
তরুণীর শরীরে মাছের লেজ ঝলসে উঠলে সে কী
করতে পারে। কেউ-কেউ তাকে মানসিক হাসপাতালে
যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছে দু’একবার। সে
নির্বিকার তাকিয়ে রয়েছে দেয়ালের দিকে।

লোকজনের কথা অথবা আচরণে ক্ষুব্ধ হয় না সে।
আজকাল প্রায় সারাক্ষণ নিজের ডেরাতেই থাকে নিজের
সঙ্গে। পথের কিছু কুড়ানো নুড়ি নিয়ে খেলা করে
আপন মনে আর নুড়ির ভেতর দেখে নেয় গোটা এক বিশ্ব।
মাঝে-মাঝে একটা মোটা খাতায় খুব রাত জেগে কী সব
যেন লেখে। সেসব কারও চোখে পড়েনি কোনওদিন।
তার মৃত্যুর পরে কোনও উৎসুক ব্যক্তি জিনিসপত্তর
ঘাঁটতে-ঘাঁটতে খাতাটার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতেও পারেন।

৯.১০.৯৭