ঠিকানা

লোকটা সেই কবে থেকে ছুটছেই। গন্তব্য
জানাই নেই তার, তবু ছুটছে দিশেহারা। কাক-ডাকা ভোর,
ঝিমঝিমে দুপুর, মোলায়েম বিকেল গড়িয়ে পড়ছে আয়েশে
গোধূলিবেলায়। লোকটার দৌড়ের বিরাম নেই, অতিশয়
শুকিয়ে-যাওয়া গলা থেকে ধোঁয়া উড়ছে যেন, কোটর থেকে
ছিটকে পড়তে চাইছে দুটি চোখ। তবু পড়ি মরি করে ছুটছে
ঢ্যাঙা লোকটা। কোন্ স্বপ্ন কিংবা দুঃস্বপ্ন ওকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে,
শুধু সেই শীর্ণকায়, ড্যাঙা লোকটাই জানে।
সন্ধ্যা পরিবেশকে ধীর, শান্ত চুমো খেতেই লোকটা কালো
মাটিতে ঢলে পড়ে, যেন একটা দিঘল কুঁজো গড়াগড়ি
যায় মুহূর্তে জন্যে। কাছের গাছের অনেকগুলো গাঢ়, সবুজ
পাতা ঢেকে দেয় আলগোছে লোকটার মুখ। একজন
পথচারী লোকটাকে অমন অসহায় পড়ে থাকতে দেখে এগিয়ে
যায়, স্পর্শ করে ওকে কোমল মুদ্রায়। শুয়ে-থাকা ব্যক্তিটির
স্পন্দন অনুভব ক’রে মুখের পত্রালি সরিয়ে দেয়। পথচারী প্রায়-
মুমূর্ষু লোকটিকে কী যেন জিগ্যেস করে। লোকটি ফিস্ফিসিয়ে
কিছু একটা ব’লে পথচারী হাতে গুঁজে দেয় কী যেন একটা
ঠিকানায় পৌছে দেয়ার বিনয়-কাতর অনুরোধের সংকেতে।

পথচারী খামটি হাতে নিয়ে হাঁটতে থাকে বনবাদাড়ে;
জানে না সে কোন্ ঠিকানায় পৌঁছে দেবে এই বার্তাময় খাম।
আকাশের নক্ষত্রমালা তাকিয়ে থাকে পথচারীর দিকে সকৌতুক।
হস্তধৃত খামটির দিকে চোখ রেখে ভাবে-কোন্ ঠিকানায় যাব?

২৪-৯-২০০২