তিনটি কিশোরী

প্রায়শই জানালার ধারে এসে দাঁড়াই খানিক
বহুক্ষণ শুয়ে ব’সে একঘেয়ে লাগলে, এদিক
ওদিক আমার দৃষ্টি যায়
শ্রমণের মতো, দেখি দৃশ্যাবলি। একদিন বিকেল বেলায়
তিনজন কিশোরীকে একসঙ্গে নম্র হেঁটে যেতে
দেখলাম, ওরা কুল খেতে
খেতে হাসি মুখে চলে গেলো; আমি যতদূর পারি
দেখি, ভাবি কোথায় ওদের ঘরবাড়ি?
সোবহান বাগ কলোনীতে? নাকি আরো কিছু দূরে?
ওরা কি একত্রে থাকে-একই বাগানের ফুল? ঘুরে
বেড়ায় প্রসন্ন মনে সকালে বিকেলে?
অকস্মাৎ ঝড় বৃষ্টি এলে
কোথায় আশ্রয় নেবে? হয়তোবা আলাদা আলাদা
বাড়িতে ওদের বসবাস। খেলাধুলা, হাসাকাঁদা
আছে, তবু তিনটি রাগিনী মৃদু বাজে
অন্তরালে, তিনজন তিনভাবে সাজে।

জনালার ধারে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বহুক্ষণ
ওদের কথাই ভাবি। মন
এ সময় পেরিয়ে স্বতন্ত্র কালে চলে যায়। দেখি
লহমায় এ-কি
তিনটি কিশোরী গায়ে যৌবন নিয়ে আছে
তিনটি সংসারে। কীরকমভাবে বাঁচে
ওরা তিনজন, আমি দেখে নিতে চাই আগে ভাগে,
যেরকম পুরাণের গোলকে বিভিন্ন ছবি জাগে,
ভাসে ভবিষ্যত।
ওরা কি হয়েছে সুখী সকলেই? অপরাহ্নে একই পথ
চলে গেছে বহুদূরে, ওরা
এখন হাঁটে না আর একসঙ্গে। তিনটি জীবন আগাগোড়া
তিন-ছাঁদে তৈরি, কেউ সুখী, কেউবা অসুখী খুব। চুপচাপ
একজন, অন্যজন ছড়ায় কথার ফুলঝুরি। পদচ্ছাপ
কারো পড়ে শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় জীবিকার টানে,
কেউ খামকাই ঘোরে এখানে সেখানে
স্ফুর্তির জোয়ারে ঢেলে মন, স্বামীর সংসারে শোভা
কেউ, যেন এ্যাকুরিয়ামের মাছ, কেউবা বিধবা।

জানালার ধারে আমি তিনটি অপরিচিতা কিশোরীর
কথা ভেবে নিরর্থক বুএক নিই যন্ত্রণার তীর।