তোমাকেই দেখি

যে-তুমি আমার কাছে আসো চায়ের পেয়ালা নিয়ে
ভোরবেলা, বসো পাশে, সে কি প্রকৃতই
তুমি? প্রায় পানিভরা মশকের মতো
তোমাকে দেখতে আর ত্বকের মোহন কোমলতা,
নমনীয় দৃষ্টির কুহক,
কোথায় উধাও, চুলে পাক
ধরেছে বিস্তর, এমনকি কলপের
মায়াও পারে না আর লুকিয়ে রাখতে
শাদার দস্যুতা। মনে হয়, তুমি নেই কোনোখানে!
কে এক পুরুষ্ট প্রেত করে আসা-যাওয়া চারপাশে,-
কখনো ড্রইংরুমে, কখনো শোবার ঘরে আর কখনোবা
ড্রেসিং টেবিলে দ্যাখে মুখশোভা
এবং ফ্রাইং প্যানে ভাজে ডিম, বাথরুমে করে
গুন্‌ গুন্‌ কখনো সখনো আর কখনো শিশুকে
শোনায় হাট্রিমা টিম টিম।

আমিও বদলে গেছি। সর্বাঙ্গে কালের
থাবার জখম নিয়ে আছি।
এখন আমাকে দেখে কাক
অথবা শালিক উড়ে দূরে চলে যায়, গিরগিটি
তাকায় অবাক।
ট্রেঞ্চের ভিতরে সৈনিকের
ভুরুর ওপরে, কানে, যুদ্ধার্ত গ্রীবায়
যেমন বিষাক্ত ধুলো জমে ওঠে, তেমনি আজ
আমার অস্তিত্বে পুঞ্জীভুত কাদাকার
ধুলো, ধুলো, ধুলো।

ইদানীং যখন কোথাও কোনো তরুণীকে দেখি
কোনো জন্মদিনের পার্টিতে কিংবা বিয়েবাড়িতে নতুন
শাড়িতে সজ্জিতা, বেণী-দোলানো সুস্মিতা,
শরীর আশ্চর্য দীপান্বিতা, তখন নিভৃতে আমি
তাকে নয়, একদার তোমাকেই দেখি।